বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, আইসিডিডিআর,বিতে রোগীর ভিড়

3 months ago 44

দুপুর আড়াইটা। স্ট্রেচারে করে হন্তদন্ত হয়ে ৩০ বছর বয়সী সাজ্জাদকে নিয়ে মহাখালী কলেরা হাসপাতাল বা আইসিডিডিআর,বিতে এলেন মো. কাওচার। দেখে মনে হয় সাজ্জাদের শরীরে একটুও শক্তি নেই। মাথা নুয়ে পড়েছে স্ট্রেচারে। হাসপাতালে প্রবেশের পর কর্মচারীরা তাকে স্ট্রেচার থেকে বেডে তুলে নেন। এরপর দ্রুত তার শরীরে পুস করা হয় স্যালাইন। পাশেই সাজ্জাদের সহধর্মিণী অপেক্ষা করতে থাকেন।

কাওচার জাগো নিউজকে জানান, মিরপুর ১০ নম্বরে একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেন তারা। গত সপ্তাহে একবার সাজ্জাদ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে আইসিডিডিআর,বি থেকেই চিকিৎসা নিয়েছিলেন। আজ দোকানে কাজ করার সময় আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তারপর দ্রুত তাকে এখানে নিয়ে আসা হয়।

এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালে আসেন কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী ইসমাত আরা বেগম। হাসপাতালের বেডে স্যালাইন চলছে তার। তার ছেলে মো. আরিফ জাগো নিউজকে জানান, গতকালও ভালো ছিলেন মা। আজ ফজরের সময় হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এরপর একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েন। অবস্থা খারাপ হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, আইসিডিডিআর,বিতে রোগীর ভিড়

মঙ্গলবার (৪ জুন) রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইসিডিডিআর,বি) গেলে দেখা যায়, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের ভিড়। হাসপাতালের বেড খালি নেই। ফলে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে বাইরে তাঁবু বানিয়ে অতিরিক্ত বেড তৈরি করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পরই আসছেন রোগীরা।

গত ৩০ মে থেকে হঠাৎ করেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। ২৮ মে আইসিডিডিআর,বিতে ৫১৫ জন রোগী এসেছিলেন। এরপর ২৯ মে এখানে চিকিৎসা নেন ৬৫৩ জন। ৩০ মে ৩০০ রোগী বেড়ে ৯৫১ জন হয়। এরপর থেকে নিয়মিত গড়ে ১২০০ এর অধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন।

গত ৩১ মে আইসিডিডিআর,বিতে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন এক হাজার ২০৮ জন। এরপর ১ জুন এসেছেন এক হাজার ৩৩০ জন, ২ জুন এক হাজার ২৭২ জন, ৩ জুন এক হাজার ২২১ জন ও ৪ জুন দুপুর ১টা পর্যন্ত ৫৬৪ জন রোগী আইসিডিডিআর,বিতে চিকিৎসা নিতে আসেন।

বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, আইসিডিডিআর,বিতে রোগীর ভিড়

চিকিৎসকরা বলেন, এই মুহূর্তে যে ডায়রিয়া হচ্ছে এটা গ্রীষ্মকালীন। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া যেমন, সালমোনেলা শিগেলা, ব্যাসিলাস, ইশ্চেরিচিয়া কোলাইয়ের কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া রোটা ভাইরাসের কারণেও হতে পারে ডায়রিয়া।

আইসিডিডিআর,বির হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, এসময়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন প্রাপ্তবয়স্করা। ৩০ মে থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। আরও দেড় মাসের মতো এই ধারা থাকবে। বয়স্কদের হওয়ায় এটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। শিশুদের সঙ্গে মায়েরা বা স্বজনরা থাকেন। কিন্তু বড়দের চিকিৎসা দেওয়া একটু সমস্যা।

বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, আইসিডিডিআর,বিতে রোগীর ভিড়

তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এমন তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিদিন ১-৩ জনের মতো মৃত অবস্থায় আসেন হাসপাতালে। আমাদের হাসপাতালে আসার পর পালস পেলেই চিকিৎসা শুরু হয়। এরপর বাকি চিকিৎসা শুরু হলে তাদের সুস্থ হওয়া সম্ভব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মুহূর্তে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে। খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে হাত ধুয়ে খেতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন, বাইরের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। আর পাতলা পায়খানা হলে স্যালাইন খেতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

এএএম/জেডএইচ/জেআইএম

Read Entire Article