চীনের জোরালো সমর্থনে মালয়েশিয়ার ব্রিকস পূর্ণ সদস্যপদ এখন বৈশ্বিক পরিসরে দেশটির অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার বড় সুযোগ তৈরি করেছে।
তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এই সিদ্ধান্ত মালয়েশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সংবেদনশীল অক্ষের মাঝখানে দাঁড় করাতে পারে, যা সূক্ষ্ম কূটনীতির দাবি করে।
নুসান্তারা একাডেমি অব স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চের জ্যেষ্ঠ ফেলো অধ্যাপক ড. আজমি হাসান বলেছেন, পরিবর্তনশীল বিশ্ব শৃঙ্খলা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত নীতির প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়ার ব্রিকস সদস্যপদ সময়োপযোগী।
তিনি বলেন, ট্রাম্প ছোট দেশগুলোকে শুল্ক দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। তাই গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর জোরদার করতে ব্রিকস মালয়েশিয়ার জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম।
আজমি মনে করেন, ব্রিকস মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। চীনের সমর্থন আমাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করে। তবে এর মানে এই নয় যে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিচ্ছি। আমরা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য করব, কিন্তু নতুন বাজারে বৈচিত্র্য আনতে হবে, তিনি বলেন।
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইয়াজিদ জুল কেপলি বলেন, চীনের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি ওয়াশিংটনের চোখে মালয়েশিয়ার বেইজিং ঘেঁষা পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
‘এটি আমাদের ব্রিকসে যোগদানের সম্ভাবনা বাড়ালেও, একইসঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের টানাপোড়েনও তৈরি করতে পারে,’ তিনি মন্তব্য করেন। ইয়াজিদ মনে করেন, ট্রাম্প যদি ব্রিকস-বিরোধী অবস্থান নেন, তাহলে মালয়েশিয়ার জন্য কূটনৈতিক ও বাণিজ্য চাপ তৈরি হতে পারে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জিওফ্রে উইলিয়ামস বলেন, ব্রিকসের অর্থনৈতিক পরিসর মালয়েশিয়ার জন্য বিশাল সুযোগ এনে দিতে পারে।
তিনি জানান, ব্রিকসের বাজারে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ এবং ২৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি রয়েছে। এটি মালয়েশিয়াকে বড় ভোক্তা বাজারে প্রবেশাধিকার ও বিনিয়োগ প্রবাহের সুযোগ দেবে।
তিনি আরও বলেন, একটি ছোট উন্মুক্ত অর্থনীতি হিসেবে মালয়েশিয়ার জন্য অংশীদারদের বৈচিত্র্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম সম্প্রতি বলেছেন, চীনের সমর্থন মালয়েশিয়ার জন্য ‘একটি মহান সম্মান’, যা দেশটিকে বৈশ্বিক মঞ্চে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ দেবে।
বর্তমানে ব্রিকসে রয়েছে ১০টি দেশ—ব্রাজিল, চীন, মিশর, ইথিওপিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত বছরের শেষ দিকে মালয়েশিয়া এই জোটের অংশীদার দেশ হয়।
চীন টানা ১৬ বছর ধরে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে ৪৮৪.১২ বিলিয়ন রিঙ্গিত, যা মালয়েশিয়ার মোট বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১৬.৮ শতাংশ।
এমআরএম/এএসএম