যশোরের নওয়াপাড়ায় ব্যবসায়ীর কাছে তিন কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের মামলায় বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনিকে খুলনা থেকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা শহরের রোজ গার্ডেন হোটলে থেকে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় তাকে আটক করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলীম।
জনি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতিক পট পরিবর্তনের পর দলীয় বিশৃঙ্খলা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে দল তার পদ স্থগিত করে।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর অভয়নগরে নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে জনির কনা ইকো পার্কে বালুতে পুঁতে ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়েক দফায় চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর স্ত্রী আসমা খাতুন। ঘটনার ১১ মাস পর চলতি বছরের ২ আগস্ট আসাদুজ্জামান জনিসহ ছয়জনের নামে অভয়নগর থানায় মামলা করেন তিনি। একই অভিযোগ স্থানীয় সেনা ক্যাম্পেও দেন ভুক্তভোগী নারী।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ডিশ ব্যবসায়ী মিঠু ও বিএনপি নেতা জনির বাবা কামরুজ্জামানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সবশেষ বৃহস্পতিবার সকালে জনিকে আটক করে পুলিশ। পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত তিন আসামি পৌর বিএনপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড সাংগঠনিক সম্পাদক সম্রাট হোসেন, নওয়াপাড়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দপ্তরী ও গরু হাটখোলার সৈকত হোসেন হিরা।
অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলিম জানিয়েছেন, বাকিদের আটকে অভিযান চালছে।
অভিযোগে আসমা খাতুন উল্লেখ করেন, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর কৌশলে সৈকত হোসেন হিরার মাধ্যমে তার স্বামী টিপুকে নিজের অফিসে ডেকে নেন বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনি। সেখানে তাকে মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন জনি। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকে জনির নিজ প্রতিষ্ঠানের হিসাবে দুই কোটি টাকা আরটিজিএস করে পাঠান আসমা খাতুন। টাকা পেয়ে টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগে আরও জানানো হয়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে ব্যবসায়ী টিপু গ্রামের বাড়ি চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেট পার হলে সৈকত হোসেন হিরা তার গতিরোধ করেন। এরপর বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিপুর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানতে পারেন টিপুকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির ‘কনা ইকো পার্কে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
টিপুকে উদ্ধারে তার স্ত্রী সেখানে গেলে আসাদুজ্জামান জনি, সম্রাট হোসেন ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে বাদীকে মারধর করেন। এরপর টিপুকে বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালু চাপা দিয়ে ভয়ভীতি দেখান এবং আরও দুই কোটি টাকা দাবি করেন। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী টিপু বাধ্য হয়ে তার ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা দিতে বলেন।
এরপর ম্যানেজার সাংবাদিক মফিজের অ্যাকাউন্টে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) করেন। এসময় আরও এক কোটি টাকার চেক আদায় করেন মফিজ। পাশাপাশি জনির নামে কেনা তিনটি ও দিলিপ সাহার নামে কেনা তিনটি ১০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেন। কাউকে কিছু না জানানো ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মিলন রহমান/এসআর/জেআইএম