ব্যাংকখাত নজরদারিতে বড় পরিবর্তন আনছে বাংলাদেশ ব্যাংক

2 months ago 7

দেশের ব্যাংকখাতের তদারকিতে সময়োপযোগী এবং মৌলিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। লক্ষ্য হচ্ছে তদারকি ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ, কার্যকর ও আধুনিক করে তোলা। এ জন্য ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

সোমবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে পর্যায়ক্রমে এ নতুন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে।

এরই মধ্যে কিছু ব্যাংকে পরীক্ষামূলকভাবে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি চালু করা হয়েছে এবং তা ইতিবাচক ফল দিয়েছে। তাই আসছে জুলাই থেকে ধাপে ধাপে সব তফসিলি ব্যাংকে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন শুরু হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই নতুন তদারকি কাঠামোর আওতায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক, বাজার, পরিচালনাগত, আইনগত এবং কৌশলগত ঝুঁকি আরও সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। সেই ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও দ্রুত নেওয়া যাবে। এতে প্রতিটি ব্যাংকের কার্যক্রম আলাদাভাবে মূল্যায়ন এবং ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোয় দ্রুত হস্তক্ষেপ করা সহজ হবে।

নতুন কাঠামো বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব সংগঠনেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। নতুনভাবে গঠন করা হবে একাধিক তদারকি বিভাগ, যেমন — তদারকি নীতিমালা ও সমন্বয় বিভাগ, তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং তদারকি বিভাগ, এবং অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধবিষয়ক ঝুঁকি তদারকি বিভাগ। এছাড়া প্রতিটি ব্যাংকের জন্য থাকবে পৃথক তদারকি দল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এই পরিবর্তন সফল করতে তদারকির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি তফসিলি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের জন্যও বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলো কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।

তদারকিকে তথ্যনির্ভর করতে তৈরি করা হচ্ছে নতুন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ব্যবস্থা। একটি কেন্দ্রীয় তদারকি তথ্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হচ্ছে যার মাধ্যমে দেশের যে কোনো ব্যাংকের ঝুঁকির চিত্র সহজে বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আশা, এই রূপান্তরের ফলে ব্যাংক খাতে জবাবদিহিতা আরও শক্ত হবে। একই সঙ্গে তদারকি কার্যক্রম হবে ফলপ্রসূ এবং প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনে ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসবে। এর মাধ্যমে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তিও আরও মজবুত হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনে সব অংশীজনের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ কামনা করেছে। যাতে সম্মিলিতভাবে একটি আধুনিক, ঝুঁকিসচেতন এবং টেকসই ব্যাংকিং পরিবেশ গড়ে তোলা যায়।

ইএআর/এমআইএইচএস/এএসএম

Read Entire Article