না ফেরার দেশে চলে গেলেন হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ও পরিবেশবাদী অ্যাক্টিভিস্ট রবার্ট রেডফোর্ড। আমেরিকান সিনেমার এই ‘শেষ সোনার ছেলে’ তার প্রিয় সানড্যান্স মাউন্টেইন কম্পাউন্ডে পাইন গাছের মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণে পরিবার-পরিজনদের মাঝে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
যে মানুষটির হাসিই কুলনেসের সংজ্ঞা হয়ে দাঁড়ায়, যার নীরবতা থেকে তৈরি হতো জানার আগ্রহ, যে আগ্রহ সৃষ্টি করতো উত্তেজনার, যিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন গ্যাটসবি কিংবা দ্য হর্স হুইসপারারের মতো সিনেমাগুলো- সেই রেডফোর্ডের অনুপ্রেরণায় অনেক নবীন সিনেমা নির্মাতাও ক্যামেরার ফ্রেমে তাদের স্বপ্ন সত্যি করার সাহস খুঁজে পেয়েছেন।
স্যান্টা মনিকার সংগ্রাম থেকে হলিউডে অমরত্ব
১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট স্যান্টা মনিকার এক অবস্থাপন্ন ঘরে জন্ম নিলেও চার্লস রবার্ট রেডফোর্ড জুনিয়রের শিশু বয়সে তাকে সংগ্রাম এবং কষ্টের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। মায়ের অসুস্থতা, বাবার সঙ্গে মানসিকভাবে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হওয়া কিংবা কখনও স্কুল থেকে বিতাড়িত হওয়া যৌবনেও তার চলার পথকে করে তুলেছিল কণ্টকাকীর্ণ। নিজের চূড়ান্ত লক্ষ্যকে খুঁজে পাওয়ার আগে ইউরোপে শিল্পকলা নিয়ে পড়া রেডফোর্ডকে অর্থ আয়ের জন্য করতে হয়েছিল অনেক ছোটখাটো কাজ, ধরেছিলেন ছবি আঁকাও।
এরপর একটা সময় তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে, পুরো বিশ্ব চিনলো তাকে!
পঞ্চাশের দশকে অভিনয়ে তার যাত্রা, তারপরই ১৯৬৯ এ পল নিউম্যানের সঙ্গে জুটি বেঁধে এলো তার বিখ্যাত সিনেমা- বাচ ক্যাসিডি অ্যান্ড দ্য সানড্যান্স কিড। এর মাধ্যমে রেডফোর্ড শুধুই একজন তারকাই হননি, তার এলোমেলো চুল, তীক্ষ্ণ নীল চোখ আর চলনে স্বাভাবিক মুগ্ধতা অভিনয় জগতে রেডফোর্ডের আসনকে করেছিল পাকাপোক্ত।
ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে সবকিছু বদলে দেওয়া
১৯৮০ সালে তিনি ‘অর্ডিনারি পিপল’ নামে একটি সিনেমা পরিচালনা করেন। পরিচালক হিসেবে প্রথম চেষ্টাতেই এই প্যামিলি ড্রামা তাকে অস্কারে তাকে এনে দেয় শ্রেষ্ঠ পরিচালকের স্বীকৃতি, এর সঙ্গে তার এটি শ্রেষ্ঠ চলচিত্রের পুরস্কারও জিতেছিল।
এরপর একে একে আসে তার এই মাস্টারপিসগুলো- এ রিভার রানস থ্রু ইট (১৯৯২), কুইজ শো (১৯৯৪), দ্য হর্স হুইসপারার (১৯৯৮)। নিজের কাব্যিক ক্যামেরার লেন্সের পেছনে তিনি ছিলেন অবিচল এবং প্রচণ্ডভাবে মানবিক। তাকে কোনোকিছু খুব জোর দিয়ে বলতে হয়নি, তিনি যেন শান্তভাবে কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন আর তাতে ফুটে উঠেছে শিল্প শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন।
তবে তার সেরা কাজ ছিল ১৯৮১ সালে সানড্যান্স ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা। তিনি কেবল একটি সিনেমার উৎসবই তৈরি করে দিয়ে যাননি, তার হাত ধরে শুরু হয়েছিল সিনেমায় নতুন যুগের সূচনা।
সানড্যান্স: যেখানে আন্ডারডগেরা কিংবদন্তি হয়ে ওঠে
সানড্যান্স চালুর আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি সিনেমাগুলোকে কেবলই কিছু বিচ্ছিন্ন চিন্তা-ভাবনা হিসেবে দেখা হতো, কারো চোখে পড়ার আগ পর্যন্ত সেগুলোর জায়গা হতো স্টুডিওর ‘ভাগাড়ে’।
কিন্তু রেডফোর্ড তাতে থেমে থাকেননি। তিনি স্টিভেন সোডারবার্গ, কুয়েন্টিন টারানটিনো, আভা ভারনে, রায়ান কুলগারদের মতো নবাগতদের সুযোগ করে দিলেন।
সানড্যান্স আজ পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক স্বাধীন সিনেমা নির্মাণের ‘হৃৎস্পন্দনে’ এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রেডফোর্ডের অস্তিত্ব।
এএমএ