ব্যাটিংয়ের এ কী হাল, ২৯৮ বলে ১৮৩টিই ডট!

14 hours ago 3

একটি দুটি নয়, পরপর চার সিরিজ হারের ঘা গায়ে। জিততে ভুলে গেছে টাইগাররা। জয় যেন ‘সোনার হরিণ’ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ কি সেই হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে জয়ের নাগাল পাবে? ভক্ত ও সমর্থকদের সেই কৌতূহলী প্রশ্নের পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন গতকাল শুক্রবার থেকে সবার মুখে মুখে। তাহলো, তবে কি সেই ‘টিপিক্যাল’ শেরে বাংলা পিচেই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে সিরিজ?

এ প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছিল উইকেটের কালচে রং দেখেই। হোম অব ক্রিকেটের উইকেটের চরিত্র, প্রকৃতি যাদের খুব ভালো জানা, তারা উইকেটের কালচে রূপ দেখেই বুঝে নিয়েছিলেন; শেরে বাংলার সেই চিরচেনা পিচ মানে বল স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরে, থেমে আসবে। বাউন্সও স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকবে। সব বল না, তবে কিছু ডেলিভারি টার্ন করবে।

যেমনটা ভাবা হয়েছিল, ঠিক তেমনটাই ঘটেছে। শেরে বাংলার কালো রঙের পিচ আজ শনিবারও ছিল যথারীতি স্লো, লো আর খানিক টার্নিং। বল স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে ব্যাটে এসেছে। তবে বিপজ্জনকভাবে লাফিয়ে বা নিচু হয়নি। বাউন্স মোটামুটি ঠিক ছিল। তবে বল টার্ন করেছে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশ ইনিংসের পুরো সময়ই বল থেমে আসছে, এবং স্পিনাররা যথেষ্ট টার্ন পেয়েছেন। যে কারণে ফ্রি স্ট্রোক প্লে, হাত খুলে খেলা ছিল বেশ কঠিন। বাংলাদেশের ব্যাটাররা সেই কাজটি পারেননি।

অনেক নিচে ৮ নম্বরে নেমে শুধু রিশাদ হোসেন ২০০ স্ট্রাইক রেটে ২ ছক্কায় ১৩ বলে ২৬ রান করেছেন। ৭ প্রতিষ্ঠিত ব্যাটারের মধ্যে তিনজন রান করলেও রিশাদ শেষ দিকে হাত খুলে খেলতে না পারলে বাংলাদেশের সংগ্রহ কিছুতেই ২০০তে (২০৭) পৌঁছাতো না।

পেস কম থাকলেও প্রথম দিকে ক্যারিবীয় পেসারদের বলে মুভমেন্ট ছিল। সেই মুভমেন্টেই আউট হয়েছেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান আর সৌম্য সরকার। শেফার্ডের অফস্টাম্পের ঠিক বাইরে থেকে ভিতরে আসা বলে সোজা ব্যাটে না খেলে কব্জির মোচড়ে ঘোরাতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পা দেন সাইফ। আর সিলসের ওভারপিচ ধরনের ডেলিভারিতে অফস্টাম্পের বাইরে ড্রাইভ করতে গিয়ে মাঝ ব্যাটে আনতে ব্যর্থ হন আবার দলে ফেরা সৌম্য। বল চলে যায় পয়েন্ট ফিল্ডারের হাতে।

এমনিতেই উইকেট স্বচ্ছন্দ, সাবলীল ব্যাটিং উপযোগী না, তার ওপর মাত্র ৮ রানে ২ ওপেনার সাজঘরে। খুব স্বাভাবিকভাবেই হাতে উইকেট রেখে খেলায় মনোযোগী হবার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন আর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু তারা বড্ড বেশি মন্থর গতিতে ব্যাট করে ফেলেছেন। ৪ জনের স্ট্রাইকরেটই ছিল বেশ কম।

শান্তর ৩২ রান করতে লেগেছে ৬৩ বল (স্ট্রাইক রেট ৫০.৬৩)। হাফ সেঞ্চুরির পরপরই আউট হয়ে যাওয়া হৃদয় ৫১ করেছেন ৯০ বলে (স্ট্রাইক রেট ৫৬.৬৬)। অন্যদিকে অধিনায়ক মিরাজ ২৭ বলে করেছেন ১৬। শুরুতে অনেকটা সময় ধুকলেও ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পাওয়া তরুণ মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচটি উইকেট, কন্ডিশন আর ক্যারিবীয় বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং বিবেচনায় খারাপ করেননি, উৎরে গেছেন।

৩০ বলে ডাবল ফিগারে পৌঁছে যাওয়া তরুণ অঙ্কন জীবনের প্রথম ওয়ানডে ইনিংসে পঞ্চাশের খুব কাছে গিয়ে ফিরে গেছেন। ৬০.৫২ স্ট্রাইক রেটে ৪৬ রানের ইনিংসটি আরও একটু লম্বা হলে হয়তো বাংলাদেশের স্কোর লাইন বড় হতো আরও। কিন্তু ৪৬ ওভারে ক্যারিবীয়ান চেজের ‘রাউন্ড দ্য উইকেটে’ করা অফস্পিনে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন অঙ্কন।

উইকেটে বল দেরিতে এসেছে। বিগ শট খেলায় সমস্যা হচ্ছিল। দলও শুরুতে বিপদে ছিল। রয়ে সয়ে খেলাটা ভুল ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা ভুল করেছেন অন্য জায়গায়। তারা যখন দেখলেন হাতে খুলে খেলা সম্ভব হচ্ছে না, বল দেরিতে আসছে, বিগ শট নিতে গেলে টাইমিংয়ের হেরফেরে আউট হবার সম্ভাবনা বেশি থাকবে, টার্নও হচ্ছে কিছু; এরকম পরিস্থিতিতে হাত খুলে খেলার চেষ্টা না করে সিঙ্গেলস আর খালি জায়গায় বল ঠেলে ডাবলস নেওয়ার চেষ্টা করলে রান আরও বেশি হতো।

কিন্তু যে তিনজন উইকেটে বেশি সময় ছিলেন, সেই তিনজই ডট দিয়েছেন অনেক। হৃদয় ৯০ বলের মধ্যে ডট দিয়েছেন ৫১টি। অঙ্কনও ৭৬ বলের মধ্যে ৪৯ বলে রান করতে পারেননি।

৪৯.৪ ওভারে অলআউট হওয়া বাংলাদেশের ব্যাটাররা মোট খেলেছেন ২৯৮ ডেলিভারি। তার মধ্যে ১৮৩টি ছিল ডট বল! মাত্র ১১৫টি স্কোরিং শট খেলেছেন সবাই মিলে।

তার মধ্যে সিঙ্গেলস ছিল ৭৩টি। ২৩টি ডাবলস থেকে এসেছে ৪৬ রান। পুরো বাংলাদেশ ইনিংসে ৩ রানের শট ছিল ৩টি, মানে ৯ রান। বাউন্ডারি হয়েছে ১৩টি (৫২ রান)। আর ছক্কার মার ছিল ৩টি (১৮)। মোট ১৯৮।

একটা ইনিংসের তিন ভাগের দুই ভাগ ডট থাকলে আর স্কোরলাইন বড় হবে কী করে? বাংলাদেশ ইনিংসে আজ যে সেটাই হলো।

উইকেটের চরিত্র জানা। এ উইকেটে বিগ হিট না নিয়ে সিঙ্গেলস-ডাবলসে খেললে রান করা সম্ভব। তারপরও সেই জানা অঙ্ক ভুল করলেন টাইগাররা। এ ভুল পথে হাঁটা চলবে আর কতকাল?

এআরবি/এমএমআর/জেআইএম

Read Entire Article