কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদ খননের আড়ালে বালু বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার চরফরাদী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরপাড়ে নারীকেলতলার চরের কৃষিজমি এখন ধ্বংসের মুখে। প্রথম দেখায় পতিত জমি মনে হলেও বালু সিন্ডিকেটের থাবায় নদী তীরে কৃষকদের ফসলের মাঠ যেন বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদ খননে কাজ করছে বিআইডব্লিওটিএ। নদ থেকে উত্তোলিত বালু অপসারণ করতে ইজারা দেয় স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু ইজরাদারের লোকজন বালু নেওয়ার পাশাপাশি নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে।
এ ছাড়া উত্তোলিত বালু নদের তীরে কৃষকদের জমিতে স্তূপ করে রাখা হয়। সেখান থেকে বালু নেওয়ার সময় কেটে ফেলা হচ্ছে জমির মাটিও। এতে এসব জমি অকেজো হয়ে পড়েছে। নষ্ট হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জমির ফসল। এমনকি কৃষকদের জমিতে বালু রাখার ভাড়ার টাকাও দেওয়া হয়নি। বাধা দিলে তাদের নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ইজারাদারের লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।
তথ্য মতে, চরফরাদী মির্জাপুর বাজারের পশ্চিম পাশ ও চরফরাদী নারিকেলতলার চর ঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদ খননের প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ঘনফুট বালু স্থানীয় তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, ব্রহ্মপুত্রের খনন প্রয়োজন হতে পারে পরিবেশ ও নৌচলাচলের স্বার্থে। কিন্তু সেই খননের আড়ালে যেন কৃষকের জীবন বিপন্ন না হয়, সেদিকে প্রশাসনের নজরদারি জরুরি। একটি নদীর পাড় বাঁচাতে গিয়ে যদি মানুষের পেটের ভাত হারিয়ে যায়, তাহলে সেই উন্নয়ন কার জন্য?
কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, আরেকবার এইখান থেকে যেটুকু বালু রেখেছিল সেটুকু তুলে নিয়ে গেছে। এখন আবার ৫ ফুট গভীর করে বালু নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সম্পদ শেষ, খুব বিপদে আছি। তাদের সঙ্গে আমরা পারি না।
গোলাপ মিয়ার ভাষ্য, এই বালু রাখার আগে যারা বালু রেখেছে তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। এখন যারা রাখছে তারা টাকা দেওয়া তো দূরের কথা আমাদের জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বালু রাখার সময় বিঘাপ্রতি ৬ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। সেই টাকাও আমাদের দেয়নি। আমরা বলতে গেলে আমাদের সমস্যা হয়।
স্থানীয় আরাফাত বলেন, রাস্তা যতটুকু আছে তার বাইরে ধান ক্ষেত দিয়ে বালুর ট্রাক নেওয়া হয়। ধুলা-বালুর জন্য রাস্তা দিয়ে চলা যায় না। বালুতে আশপাশের ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা ঘাট ভেঙে যাচ্ছে তবুও নীরব স্থানীয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে নারিকেলতলার চর বালুর ইজারাদারের অংশীদার মো. রাসেল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকারি খাস জমিতে বালু রাখা হয়। সেখান থেকেই ট্রাকের করে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। অভিযোগকারী জমির মালকিদের আওয়ামী লীগের দোসর বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, এখনো আমাদের বালু নেওয়া বাকি আছে। যেই বালু থাকার কথা সেখান থেকে অনেক কম আছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, নদীর গভীরতা বৃদ্ধির জন্য বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্পের অধীনে খনন করছে। ব্রহ্মপুত্র নদের খননকৃত বালু উপজেলা প্রশাসনের ৬ সদস্যের একটি কমিটির মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়। ইজারাদাররা শুধু উত্তোলিত বালু বিক্রি করতে পারবে। এর বাইরে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবসময় নজরদারি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি দুটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। কয়েকদিন আগেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।