ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি ভেটেরিনারি হাসপাতালগুলোতে তিন বছর ধরে নেই কুকুর-বিড়ালসহ পোষা প্রাণীর জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন। ফলে এসব পোষা পশুর জন্য এ ভ্যাকসিন অতিরিক্ত মূল্যে কিনতে হচ্ছে বাইরের ফার্মেসি থেকে। সেখানেও এ ভ্যাকসিন সরবরাহ কম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেকে বাসায় পোষা প্রাণী কুকুর-বিড়াল পালন করে থাকেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীগুলো পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠে। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক সময়ে এগুলোকে টিকা দেওয়া। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জলাতঙ্কের র্যাবিস ভ্যাকসিন। কারণ কুকুর বিড়ালের আঁচড় বা কামড়ে মানুষের শরীরে জলাতঙ্ক রোগ ছড়াতে পারে। কুকুর বিড়াল জন্মের তিন মাসের মাথায় র্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হলে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কিন্তু গত তিন বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৯টি সরকারি ভেটেরিনারি হাসপাতালে কুকুর-বিড়ালকে দেওয়ার জলাতঙ্কের র্যাবিস ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। হাসপাতালের দেওয়ালে ভ্যাকসিন না থাকার বিষয়টি লিখে সাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি হাসপাতালে আসলে চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশন লিখে দিলে বাইরে থেকে কিনে এনে পোষা কুকুর-বিড়ালকে দিতে হয় এ ভ্যাকসিন। সরকারিভাবে ৫০ টাকায় র্যাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া গেলেও বাইরে তা ক্রয় করতে হয় ২০০-৩০০ টাকায়। তারপরও এ ভ্যাকসিন দোকানে মিলছে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ভেটেরিনারি হাসপাতালে আসা আরিফুল ইসলাম নাম নামে একজন জানান, শখের বশে আমি বিড়াল পালন করি। যেহেতু এটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকবে তাই জলাতঙ্কের ভয় থেকে হাসপাতালে টিকা দিতে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল থেকে জানানো হলো তাদের কাছে সরবরাহ নেই। উনারা স্লিপ লিখে দিয়েছেন, এখন বাইরে থাকে কিনে এনে দিতে হবে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজি মোস্তাইন বিল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, ‘তিন বছর আগে র্যাবিস ভ্যাকসিন উপজেলা হাসপাতালে মাত্র কয়েকটি এসেছিল। আর গত দুবছর ধরে তো ভ্যাকসিন আসেনি। তাই কেউ আসলে স্লিপ লিখে দিলে উনারা বাইরে থেকে এনে দিলে আমরা তা দিয়ে দেই।’
আশুগঞ্জ উপজেলা পানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নূর জাহান বেগম জানান, ‘আমি একবছর আগে এ হাসপাতালে যোগদান করেছি। এসে কোনো ভ্যাকসিন পাইনি। এর আগেও নাকি দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পশু হাসপাতালের সামনে ভেটেরিনারি ফার্মেসি হেভেন মেডিকেল হলের পরিচালক মনোজিত রায় জানান, ‘র্যাবিস ভ্যাকসিনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ওষুধ কোম্পানি চাহিদা অনুযায়ী ঠিকভাবে আমাদের সরবরাহ করতে পারছে না। তাই অনেক সময় কাস্টমারকে দিতে পারি না।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, রাজধানীর মহাখালীতে আমাদের র্যাবিস ভ্যাকসিন উৎপাদন হয়। গত একবছর ধরে সেখানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আমাদের এলআরআই অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছে। উনারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এখন মানুষ কুকুর বিড়াল পালাতে এ ভ্যাকসিনের চাহিদা বেড়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি তা সমাধান হয়ে যাবে।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/আরএইচ/জেআইএম