ভরা জোয়ারে ডুবে যায় বিদ্যালয়, শঙ্কায় অভিভাবক-শিক্ষার্থী

8 hours ago 5

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের পূর্ব খাউলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি জোয়ারের পানিতে মাসে দুবার প্লাবিত হয়। দুর্ভোগের শিকার হন শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা। 

ভরা জোয়ার এলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দেড় শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীর মনে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি বিদ্যালয়ে দ্রুত সাইক্লোন শেল্টার কাম স্কুল ভবন নির্মাণ করা হোক। পাশাপাশি মাঠ উঁচু করার দাবিও তাদের।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ২০০০ সালে চার কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এক কক্ষে অফিস কার্যক্রম ও তিন কক্ষে পাঠদান চলছে। বিদ্যালয়ে ১৫৪ শিক্ষার্থী ও ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। 

সরেজমিন দেখা যায়, দুপুরে স্কুলের চারপাশে জোয়ারের পানি থইথই করছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে আতঙ্ক দেখা গেছে। যে কোনো মুহূর্তে পানি ঢুকে পড়তে পারে কক্ষে। লবণাক্ততার প্রভাবে ভবনের দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, মাসে দুবার অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে (সর্বোচ্চ বা প্রবল জোয়ার) এভাবে পানি ওঠে। সে সময় খেলাধুলা ও পিটি বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে শ্রেণিকক্ষেও পানি ঢুকে পড়ে। আসা-যাওয়া করতে সমস্যা হয়। মাঠ ভরাট ও নতুন ভবন নির্মাণের দাবি তাদের।

অভিভাবক আব্দুল হাকিম বলেন, ভরা জোয়ারের সময় বাচ্চাদের স্কুল পাঠাতে ভয় লাগে। পানি এসে পড়লে ক্লাসের ভেতর বসা যায় না। সরকার যদি দ্রুত উঁচু ভবন করে দেয়, তাহলে সবার দুশ্চিন্তা দূর হবে। 

রুবিনা বেগম নামে আরেকজন বলেন, আমার ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মাসে দুবার পানি ওঠে, তখন ভিজে ভিজে ক্লাস করতে হয়। লবণ পানিতে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাত-পায়ে সমস্যা হয়। আমরা চাই সরকার দ্রুত নতুন ভবন তৈরি করুক। 

অন্য অভিভাবক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামে সাইক্লোন শেল্টার নেই। ঝড়-বন্যা এলে কোথায় আশ্রয় নেব বুঝতে পারি না। এখানে যদি সাইক্লোন শেল্টার কাম স্কুল ভবন হয়, তাহলে বাচ্চাদের পড়াশোনা ও আমাদের নিরাপত্তা দুটিই নিশ্চিত হবে। 

সালমা বেগম বলেন, বাচ্চারা খেলাধুলা করতে পারে না মাঠে পানি জমে থাকে। নতুন ভবনের পাশাপাশি মাঠ উঁচু করলে বাচ্চারা খেলাধুলা করতে পারবে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার রায় বলেন, জোয়ারের পানি ঢুকে পড়লে শিক্ষার্থীরা ভয়ে থাকে, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে এ ভোগান্তি সহ্য করছি। স্থায়ী সমাধানের জন্য মাঠ উঁচু করা ও টেকসই নতুন ভবন নির্মাণ সময়ের দাবি। 

প্রধান শিক্ষক কামরুল আহসান বাবলু কালবেলাকে বলেন, চারটি গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস এ এলাকায়। কাছাকাছি কোনো সাইক্লোন শেল্টার নেই। যদি বিদ্যালয়ে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ হয়, তাহলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জুয়েল কালবেলাকে বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত করছি। উপজেলায় ৩০৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০টি এখনো টিনশেড। নতুন ভবন ও মাঠ ভরাটের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে। শুধু ভবন নয়, মাটি ভরাট, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, প্রতিটি বিদ্যালয় শিক্ষার পাশাপাশি দুর্যোগকালে মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করুক। যদি কোনো বিদ্যালয় বাদ পড়ে, তবে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত করা হবে। 

Read Entire Article