‘ভারত সব প্রতিবেশীকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে’

2 weeks ago 10

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমান পরিস্থিতি একা সামাল দিতে পারবে না। তাই সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র-শক্তি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ভারত তাদের সব প্রতিবেশীকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশকে তারা সেভেন সিস্টার্সের একটি রাজ্যের মতো দেখতো। ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক স্বার্থে অবস্থান নিয়ে বিগত সরকার এ দেশের গণতন্ত্র হরণ করেছে।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) প্রেস ক্লাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ আয়োজিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য-বিরোধ সুরাহার পথ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ঐক্যের ক্ষেত্রে অনেকগুলো মতপার্থক্য আছে। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রয়োজন। এর বাইরে রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন পক্ষের নানান অ্যাজেন্ডা আছে। তাই এখানে আমাদের একটা জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। বৈষম্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রে আছে। এসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার ছাড়া আমরা সামনে এগোতে পারবে না। আগামী জানুয়ারি মধ্যে যদি অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সুষ্ঠু নির্বাচন করে বিদায় নিতে পারে তাহলে এটা হবে তার সবচাইতে বড় সাফল্য।

আলোচনায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান মাহবুব মোর্শেদ বলেন, কীভাবে আমরা বহু মতাদর্শের মধ্যকার বিরোধ নিরসন করতে পারি এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতো বক্তব্য দিতে শুরু করেছে। কেউ বলছে, বেশি সময় নেন, কেউ বলছে দ্রুত নির্বাচন দেন। এই অবস্থায় সংবিধান, নির্বাচনের প্রশ্নে বিরোধ অবশ্যই হবে। অর্থাৎ আমরা সংস্কারের জায়গাটা আমরা তৈরি করতে পারছি না।

তিনি বলেন, গণ অভ্যুত্থানে সব শ্রেণি, পেশা, ধর্মের মানুষ একটা জায়গায় এসে মিলিত হয়েছিল ৫ আগস্টে। এখন কেউ যদি এখানে ডানপন্থি রাষ্ট্র গঠন করতে চায় সেটা সম্ভব না, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাইলেও সম্ভব না। আমাদের বিবাদ সত্ত্বেও একটা সুনির্দিষ্ট মধ্যবিন্দুতে এসে পৌঁছতে হবে। যেখান থেকে বাংলাদেশ নতুন একটা অভিযাত্রা শুরু করতে পারবে।

এসময় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা সবাই রাষ্ট্র-সমাজের ভালো চাই। এটা আমাদের ঐকমত্যের ভিত্তি।

তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন মুখ বন্ধ করে ছিলাম। এখন সেই বাধাটা মুক্ত হয়ে গেছে। আমরা এখন কথা বলতে পারছি, কিন্তু তার মানে এই নয় যা ইচ্ছা তাই বলতে হবে। যারা নীতি নির্ধারণে আছেন তাদের সবকিছু নিয়েই ভাবতে হবে।

তিনি বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে বলা হয় সংস্কার রাজনৈতিক সরকার করবে। কিন্তু যে অবস্থায় ছিলাম আমরা তা থেকে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাতে চাই, তাহলে আমাদের কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। নির্বাচন অবশ্যই দরকার। নির্বাচনের জন্যই এত কিছু হয়েছে। ন্যূনতম সংস্কার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব না।

তিনি আরও বলেন, রাজনীতিকরা দেশ চালাতে পারবে, কিন্তু আপনারা গণতন্ত্র পাবেন না। তাই একটু ধৈর্য ধরতে হবে। যে ১০টা সংস্কার কমিশন হয়েছে তাদের শিগগির রিপোর্ট দেওয়ার কথা। তিন মাসের মধ্যে একটা পর্যালোচনা হোক, এখন কি করা যায়, নির্বাচিত সরকার আসলে কি কি করবে। এগুলোর তো ধারাবাহিকতা লাগবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম বলেন, জুলাই বিপ্লবের আগে দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া কাউকেই খুঁজে পাওয়া যেত না। আর দেশে পিতা ছাড়া আর কেউই কিছু করেনি। ৫ আগস্টে দেখলাম, সবাই আছে শুধু আওয়ামী লীগ নেই। এই বৈচিত্রের ঐক্যই বাংলাদেশ।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মামুন মাহবুব বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান একটা শিক্ষা দিয়েছে যে তোমরা যতই ক্ষমতাসীন হও জনগণের শক্তির সামনে কোনো শক্তিই টিকে থাকতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য দূর না করলে ফ্যাসিবাদ যাবে না।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের সভাপতি শেখ আব্দুন নুর বলেন, দেশ একটা সুন্দর জায়গায় না পৌঁছানো পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেন সঠিক পথে থাকে আমরা সেই লক্ষ্যে সচেষ্ট থাকবো।

এনএস/এমআইএইচএস/জিকেএস

Read Entire Article