ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, ভারত স্বার্থে আঘাত লাগায় বাংলাদেশের ওপর ক্ষেপে গেছে। বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের স্বার্থে সবকিছু করে দেশকে গিলে খাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল। দেশ আজ ভারতের রাহুমুক্ত হয়েছে। ভারতের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে এখন আর কিছু হচ্ছে না। তাই তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
ভারত এখন পায়ে পাড়া দিয়ে যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উগ্রবাদী ইসকনকে দিয়ে সরকারি আইনজীবীকে হত্যা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ভারত এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে উসকানি দিচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন হাইকমিশন, উপহাইকমিশনে হামলা ও পতাকা ছিঁড়ে চরম অসভ্যতার পরিচয় দিয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশবিরোধী ভারতীয় উসকানির প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মাওলানা ইউনুছ আহমাদ আন্তর্জাতিক আইন এবং ভিয়েনা কনভেনশনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি দাবি করে বলেন, মুসলমানদের হত্যা করে দেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সৃষ্টি করে গৃহযুদ্ধ লাগাতে ষড়যন্ত্র করছে ভারত। কিন্তু মুসলমানরা অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। জনগণ ক্ষেপে গেলে জালিমদের রক্ষা হবে না।
সহকারী হাইকমিশনে এ ধরনের হামলা, পতাকা পুড়িয়ে ফেলা এবং কূটনীতিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনাকে অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও উসকানি আখ্যা দিয়ে মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনকে ডেকে তীব্র ক্ষোভ জানাতে হবে। নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে ভারত থেকে সব দূতাবাস গুটিয়ে ফেলতে হবে।
সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, উত্তর সেক্রেটারি মাওলানা আরফিুল ইসলাম, দক্ষিণ সেক্রেটারি ডা. শহিদুল ইসলাম, মুফতি হাফিজুল হক ফাইয়াজ। দক্ষিণ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কে এম শরীয়াতুল্লাহ ও উত্তর সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি ফরিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গাজী আতাউর রহমান বলেন, কলকাতা ও আগরতলায় ভারতের সরকারদলীয় উগ্র কর্মীরা বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলা করে দেশে যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। বিগত ১৬ বছরে ভারতের অভিপ্রায়ে শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করেছিল। হাসিনা জনতার আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। খুনি হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত ভারতের মিডিয়াগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক নিউজ প্রচার করছে। ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা ভারতকে ভয় করি না। এ দেশে ১৬ কোটি যোদ্ধা ভারতের চক্রান্ত রুখে দিতে প্রস্তুত। ইসকন ভারতের উগ্রবাদী সংগঠন। ভারতের মদদে ইসকন নেতা চিন্ময় দাস বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত। বাংলাদেশের পতাকার ওপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করে রাষ্ট্রদ্রোহ কাজ করায় দেশের আদালতে তার নামে মামলা হয়েছে। সে জন্য চিন্ময়কে গ্রেফতার করা হলে ভারতের সংসদে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি এটা কিসের আলামত?
মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, ভারত সরকারের প্রকাশ্য ইন্ধনে হাইকমিশনে হামলা হয়েছে। লাল-সবুজের পতাকা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন, উপহাইকমিশনসহ কূটনীতিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ভারত সরকারের মদদে প্রতিনিয়ত মসজিদ, মাদরাসা, মুসলমানদের দোকানপাট, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। মুসলমান হত্যা করে বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে। সেই ভারত এখন আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বয়ান দিচ্ছে?
সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, আগস্ট বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পরাজয়ের পর মোদি হাসিনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। হাসিনা ভারতে বসে বসে লাল-সবুজের বাংলায় অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। বাংলাদেশের জনগণ ভারতবিরোধী নয়, যেমন ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী, তেমনি মোদিবিরোধী। আগরতলা উপহাইকমিশনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানান তিনি।