আকাশে তুলার মতো শরতের সাদা মেঘ আর সদ্য বিদায় নেওয়া শ্রাবণের আবহাওয়া যখন রেশারেশি করছে, এমন দিনে সুযোগ এলো হামিদুজ্জামান খান স্কাল্পচার পার্ক ভ্রমণের। সদ্যবিদায়ী খ্যাতিমান ভাস্কর ও চিত্রকর হামিদুজ্জামান খান।
গাজীপুরের কড্ডায় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র সামিট গ্রুপ পাওয়ার প্ল্যান্টের ভেতরে এই স্কাল্পচার পার্ক। শিল্পী, শিল্পানুরাগী, শিক্ষক ও সাংবাদিকের একটি দল নিয়ে ছোট্ট রাস্তা ধরে এগুলো গাড়ি। কিছুদূর যেতেই দেখা গেল পানিতে ঘূর্ণি তুলে বয়ে চলেছে তুরাগ নদী।
নদীর পাশ থেকে কিছুদূর গিয়ে পাওয়ার প্ল্যান্টের দ্বিতীয় প্রবেশদ্বার। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই, ভেতরটা কত বিস্তৃত। বিশাল বিশাল যন্ত্র আর স্টোরেজ ট্যাঙ্কের ভেতর দিয়ে গাড়ি গিয়ে থামলো একটি মিলনায়তনের সামনে। প্রয়াত ভাস্কর হামিদুজ্জামানকে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করা হবে সেখানে।
পাওয়ার প্ল্যান্টের দরজা দিয়ে দলটি মূলত ঢুকে পড়েছে ভাস্কর্য-বাগানে। প্রকৃতি, যন্ত্র আর শিল্পকর্ম মিলে এক অদ্ভুত পরিবেশ সেখানে। ২০১৯ সালে উদ্বোধন করা হয় বাংলাদেশের প্রথম ওপেন-এয়ার স্কাল্পচার পার্কটি। ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্পকে মাথায় রেখে পুরো জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শিল্পকর্ম সাজিয়ে গেছেন হামিদুজ্জামান খান। তার করা ভাস্কর্যগুলোতে ধরা দিয়েছে আধুনিক আর সমকালীন সব উপকরণ, যাতে তার সিগনেচারও রয়েছে। চোখে পড়লো দেশের সবচেয়ে লম্বা মুরাল, ‘শ্রম ও সৃষ্টি’, দৈর্ঘ্য ৩৪০ ফুট।
বেশ কয়েকটি ধাতব পাখির দেখা মিলল। এই পাখি নিয়ে হামিদুজ্জামানের রয়েছে বহু কাজ। সারাজবিন উনি অনেকগুলো কাজ করেছেন। চোখে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া রিক্সা, কাছেই ল্যাম্প পোস্টের নিচে বই পড়ছে একটি ধাতব দেহ, যেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর!
গাড়ি থেকে নেমে পুরো পার্ক ঘুরে দেখেন হামিদুজ্জামান খানের স্ত্রী শিল্পী আইভি জামান। তিনিই অতিথিদের ঘুরিয়ে দেখান পার্কটি। এ সময় তিনি স্মৃতিচারণ করেন হামিদুজ্জামান খানের সহকর্মী, সহপাঠী, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ রকম একক স্কাল্পচার পার্ক পৃথিবীতে কম আছে। কোরিয়ার চারটা পার্কে তার শিল্পকর্ম আছে। আমারও একটা ইন্টারন্যাশনাল পার্কে শিল্পকর্ম আছে। সে নিজের মৃত্যু স্বীকার করেনি। এখন বুঝি, সে বেঁচে আছে এই স্কাল্পচার পার্কের মধ্যে। সে বেঁচে থাকবে বহু বছর।’
স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন শিল্পী নিসার হোসেন, শিল্পরসিক ময়নুল আবেদিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক নাসিমুল খবির ডিউক। ভার্চুয়ালি এ আয়োজনে যুক্ত ছিলেন সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান।
এএমপি/আরএমডি