বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের কনস্যুলেট এবং অ্যাম্বেসি কার্যক্রম না থাকায় নাগরিকদের ভারত অথবা নেপালে যেতে হচ্ছে ভিসার জন্য। সঠিক নথিপত্র পাওয়ার পরও ভ্রমণের জন্য ভারত ভিসা প্রত্যাখ্যান করছে। ভোগান্তি এড়াতে বাংলাদেশে ইউরোপীয় দেশগুলোর দূতাবাস অথবা কনস্যুলেট স্থাপনের দাবি জানিয়েছে ইউরোপ গমনেচ্ছু ভিসাপ্রত্যাশী ঐক্য পরিষদ।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে ইউরোপের ভিসাপ্রত্যাশীরা বলেন, আমরা ভিসার জন্য দিল্লি যেতে চাই না। নেপালের বিভিন্ন দূতাবাসে ভিসার আবেদনের জন্য বিভিন্ন সময় কারণ ছাড়া অফলোড করা হয়। ফলে অনেকে ভিসা আবেদনে ব্যর্থ হচ্ছেন। ইউরোপের ভিসা আনতে অন্য দেশে গিয়ে হেনস্তা হতে চাই না। এতে আমাদের অনেক অর্থ ও সময় অপচয় হয়। বিদেশের আগে আমরা আর বিদেশ যেতে চাই না।
অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বলেন, আমরা চাই দেশের টাকা দেশে থাকুক। প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চাইলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। তারা চাইলে দেশে কনস্যুলেট স্থাপন করতে পারেন। উপদেষ্টাদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, প্রবাসীদের রক্ষায় ও অধিক কর্মসংস্থানের জন্য দেশে ইউরোপীয় দেশগুলোর দূতাবাস স্থাপন করুন। অথবা ভিএফএস অফিসের মাধ্যমে আমাদের ফাইলগুলো জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যেন অন্য দেশে গিয়ে অর্থ আর সময় অপচয় করতে না হয়। আমরা আর হেনস্তার শিকার হতে চাই না।
মানববন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি নাফিসা ইসলাম খান বলেন, দিল্লিতে অবস্থিত ইউরোপীয় দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের নাগরিকদের সময়মতো অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সঠিক নথিপত্র পাওয়ার পরও ভ্রমণের জন্য ভারত আমাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করছে। এজন্য ভিসা আবেদন ও কনস্যুলার সেবা পেতে সময় লাগছে। আমরা মনে করি ইউরোপীয় সব কনস্যুলেট ও দূতাবাস কার্যক্রম যেন বাংলাদেশেই সম্পন্ন করা যায় তা নিশ্চিত করা জরুরি। তাতে ইউরোপের দেশগুলোতে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি যেতে পারবে এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহও আরও বাড়বে।
সদস্যসচিব মেহেদী হাসান আশিক জানান, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে অভিবাসন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে যাত্রা করা নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের কনস্যুলেট এবং দূতাবাস কার্যক্রম না থাকায় নাগরিকদের অন্য দেশ অভিমুখী হতে হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সময় অপচয় হচ্ছে। রেমিট্যান্স হারাচ্ছে বাংলাদেশ। সে জন্য আমাদের একটাই দাবি হচ্ছে, বাংলাদেশে ইউরোপীয় দেশগুলোর দূতাবাস বা কনস্যুলেট স্থাপন করতে হবে।
মানববন্ধনে সংকট সমাধানে চার দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে ঐক্য পরিষদ। সেগুলো হলো :
সময় ও খরচ সাশ্রয় : বাংলাদেশে যদি সকল কার্যক্রম চালু থাকে, তবে দিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। এতে করে সময় ও খরচ উভয়ই বাঁচবে। জনগণ উপকৃত হবে, ইউরোপ গমনে খরচ কমবে।
কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধি : স্থানীয় সেবা গ্রহণের মাধ্যমে আবেদনের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও সহজ হবে, ফলে নাগরিকরা দ্রুত ভিসা ও অন্যান্য সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
সেবা প্রদানে গুণগত মান বৃদ্ধি : বাংলাদেশে সরাসরি অ্যাম্বাসি/কনস্যুলেট কার্যক্রম চালু থাকলে, আমাদের নাগরিকরা সঠিক ও নির্ভুল তথ্য পেতে সক্ষম হবেন এবং কোনো দ্বিধা ছাড়াই সহজে পরামর্শ নিতে পারবেন।
স্থানীয় কর্মসংস্থান ও যোগাযোগ উন্নয়ন : এ পদক্ষেপে স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ থাকবে এবং বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।