‘ভিসির বাংলোয় ঠাঁই চাই’ কর্মসূচি ঘোষণা ঢাবি ছাত্রীদের

4 hours ago 4

ছাত্রীদের আবাসন সংকট সমাধানে দাবি আদায়ের জন্য ভিসির বাসভবনের সামনে আগামী মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ‘ভিসির বাংলোয় ঠাঁই চাই’ শীর্ষক কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নারী শিক্ষার্থীরা। 

রোববার (১২ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানান শিক্ষার্থীরা। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান ইমু। তিনি বলেন, নতুন হল তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রীদের অস্থায়ী আবাসন হিসেবে ভবন ভাড়া করে হোস্টেল তৈরি করা, গণরুম বিলুপ্তি ও নতুন হল মূল ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে নির্মাণসহ ৭ দফা দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্রীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গত ২ জানুয়ারি সর্বশেষ মতবিনিময় সভা হয়। ২৯ ডিসেম্বর থেকে চলমান আন্দোলন থেকে নারী শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু প্রাপ্তি রয়েছে। সেগুলো হলো- রোকেয়া হল বাদে অন্য চারটি ছাত্রী হলে পরীক্ষামূলকভাবে নিজ হলের অনাবাসিক ছাত্রী প্রবেশের অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা। ধারাবাহিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সময়সীমা ও প্রবেশাধিকার আরও সম্প্রসারণের আশ্বাস; আর্থিকভাবে দুর্বল অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের একাংশকে মাসিক বৃত্তি দেওয়ার কার্যক্রম দ্রুত শুরু হওয়ার আশ্বাস। ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরুর মৌখিক আশ্বাস; নতুন হল নির্মাণের স্থান নির্ধারণে ‘রিভিউ কমিটি’ গঠন করা হবে; ডাকসু নির্বাচিত প্রতিনিধি ব্যতীত হল নির্মাণ রিভিউ কমিটি বা অন্য কোনো কমিটিতে কোনো শিক্ষার্থী-প্রতিনিধি রাখা হবে না; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা রিস্ক এসেসমেন্ট করে প্রযোজনীয় সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস; শামসুন নাহার হলে কাঁচাবাজার, ফলমূলের নতুন দোকান তৈরি করা হবে।

এছাড়া, এখন পর্যন্ত বেশকিছু অমীমাংসিত দাবি রয়েছে বলে জানান ইসরাত জাহান ইমু। দাবিগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ভবন ভাড়া করে ছাত্রীদের জন্য অস্থায়ী আবেদন হিসেবে হোস্টেল চালু করা। বিদ্যমান ছাত্রী হলগুলোতে বর্ধিত ভবন নির্মাণনহ নতুন দুটি হল স্থাপন বাবদ আর্থিক পরিকল্পনা ঘোষণা করা। এই নির্মাণকালীন দীর্ঘ সময়ের জন্য ছাত্রীদের অস্থায়ী আবাসন হিসেবে হোস্টেলের ব্যবস্থা করার আবেদন জানানো হলেও এ বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। যেখানে হল নির্মাণ ব্যয় বাবদ তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা সম্ভব দেখানে ছাত্রীদের অস্থায়ী আবাসন হিসেবে হোস্টেল ভাড়া করার আর্থিক অসামর্থ্য ও আইনগত জটিলতা প্রকাশ মোটেও বোধগম্য নয়। আমাদের সাথে আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩-এর চাপ্টার ১২ ও ১৩ অনুযায়ী প্রশাসনিকভাবে এ ধরনের ব্যবস্থা করার আইনি বৈধতা নেই। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩-এ এ ধরনের কোনো বিধান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের চোখে পড়েনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩-এর ২৪ (ডি) এবং ৪৫(১) ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো হোস্টেল তৈরি কিংবা বাতিলের এখতিয়ার একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের রয়েছে। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন করে হোস্টেল তৈরি বা অস্থায়ী আবাসনের বন্দোবস্ত করতে পারে।

ইসরাত জাহান ইমু আরও বলেন, গণরুম বিলুপ্তির দাবি পুরোপুরি উপেক্ষা করে যাওয়া হয়েছে; নতুন হল মূল ক্যাম্পাসেই হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি; আর্থিক সাহায্য কয়জনকে, কত টাকা করে এবং কবে থেকে দেওয়া হবে কোনো সংখ্যা জানানো হয়নি। বৃত্তি প্রদান সম্পর্কিত আপডেটেড কোনো বিজ্ঞত্তি প্রকাশ করা হয়নি; শতভাগ আবাসিকীকরণের কোনো সদিচ্ছা ব্যক্ত করা হয়নি; এক খাটে এক সিট ভিত্তিতে ডাবলিং প্রথা বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা জানানো হয়নি।’

প্রসঙ্গত, প্রায় ১৯ হাজার নারী শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দকৃত ৫টি হলের মাত্র ৪ হাজার সিটে অবস্থান করছেন ৮ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী। ছাত্রী হলের ৫টির মধ্যে ৩টি হলই মূল ক্যাম্পাস এলাকার বাইরে হওয়ায় নিয়মিত সীমাহীন ভোগান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হতে হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে তীব্র হল সংকট নিরসনে ছাত্রীরা শতভাগ আবাসিকীকরণের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন।

Read Entire Article