ভিড়ে জুতা হারিয়ে খালি পায়ে হাজতে ফিরলেন তৌহিদ আফ্রিদি

2 weeks ago 11

জুলাই আন্দোলনের সময়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ তৌহিদ আফ্রিদির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ্ ফারজানা হকের আদালত এ আদেশ দেন। এদিন বিকেলে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় তৌহিদ আফ্রিদিকে আদালতের হাজতখানা থেকে এজলাসে তোলা হয়। রিমান্ড মঞ্জুর শেষে তাকে পুনরায় আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার পথে সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্যের ভিড়ের মধ্যে জুতা হারিয়ে ফেলেন তৌহিদ আফ্রিদি। পরে খালি পায়ে হাজতখানায় ঢুকেন তিনি।

রিমান্ড শুনানি চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুদ্দোহা সুমন আসামি তৌহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে হত্যায় সহায়তার অভিযোগ এনে বক্তব্য দেন। এসময় আসামির কাঠগড়ায় থাকা তৌহিদ আফ্রিদি দুইদিকে মাথা নেড়ে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে নাকচ করেন।

এদিন তৌহিদ আফ্রিদিকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান।

রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ ও বিদেশে একজন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও মাইটিভি চ্যানেলের পরিচালক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে উল্লিখিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত পতিত সরকারের বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

চব্বিশের জুলাইয়ে স্বৈরাচারীর পক্ষ নিয়ে নিজে ও অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং যারা তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন তাদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এক্ষেত্রে সরাসরি একজন মিডিয়া সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে এবং ওই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হয়ে বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে লাইভ প্রচার করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে ছাত্র জনতার দাবিকে উপেক্ষা করে আন্দোলন বিরোধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ যোগায়।

আরও বলা হয়, আসামির উসকানিমূলক কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণে মামলার ভিকটিম আসাদুল হক বাবু মৃত্যুবরণ করে বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। মামলার প্রকৃত ঘটনা, অজ্ঞাতনামা আসামিদের পরিচয় শনাক্তকরণ ও রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আসামিকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড প্রয়োজন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রোববার (২৪ আগস্ট) রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেফতার করেন সিআইডি পুলিশ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন আসাদুল। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামির তালিকায় নাসির উদ্দিন ও তৌহিদ আফ্রিদির নামও রয়েছে। মামলায় নাসির উদ্দিন ২২ নম্বর এবং তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি ১১ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।

একই মামলায় গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থানা এলাকা থেকে নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ১৮ আগস্ট তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত ২৩ আগস্ট আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এমআইএন/এমএএইচ/এএসএম

Read Entire Article