ভুয়া আসামি দাঁড় করিয়ে জামিন, ৪ জনের নামে মামলার নির্দেশ আদালতের
লক্ষ্মীপুরে আদালতে ভুয়া ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে প্রবাসে থাকা আসামিদের জামিন নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত আইনজীবী সহকারীসহ চারজনের নামে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে জুডিশিয়াল ১ নং আদালতের (রামগঞ্জ) ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ নির্দেশ দেন।
এদিকে এ ঘটনায় নির্দেশনা অনুযায়ী আদালতে মুচলেকা দিয়েছেন আসামিদের আইনজীবী লুৎফুর রহমান রহিম গাজী। ভবিষ্যতে ঘটনার পুনরাবৃত্তি করবে না বলে মুচলেকা দেওয়ায় আইনজীবীকে ক্ষমা করেন আদালত।
আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) আব্দুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আইনজীবী সহকারী ও জামিনের মামলার তদবিরকারকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মামলার বাদী জুডিশিয়াল ১ নং আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল বাদী হয়ে সদর আদালতে মামলাটি দায়ের করবেন। অভিযুক্তরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা দায়েরেরর প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্তদের আটক বা গ্রেপ্তারে কোনো আদেশ দেয়নি আদালত। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আইনজীবী আদালতে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এতে আদালত তাকে ঘটনা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
অভিযুক্তিরা হলেন আইনজীবী সহকারী আবুল কাসেম, জামিনের তদবির কারক আনোয়ার হোসেন তদবির কারক, জামিনপ্রাপ্ত ভুয়া আসামি সাইফুল ওরফে গাল কাটা সাইফুল ও ফরহাদ।
আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের সোন্দড়া গ্রামের আবদুল খালেকদের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে তাজুল ইসলাম খোকাদের জমিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালে আদালতে মামলা হয়। ২০২৪ সালের ১৯ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ থানার এসআই মো. মনিরুজ্জামান আদালতে ৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তারা হলেন তাজুল ইসলাম খোকা, সজীব, আনোয়ার হোসেন ও সাইফুল ইসলাম শুভ। এদিকে ঘটনা পর আসামি সজিব সৌদি আরব ও সাইফুল কাতার চলে যায়।
অন্যদিকে গত বছরের ৩০ জুন আসামি খোকা ও আনোয়ার জামিন নেয়। তখন সজিব ও সাইফুলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালতের বিচারক। আসামিরা বিদেশে রয়েছেন। কিন্তু গত ৬ নভেম্বর মামলার ২ ও ৪ নম্বর আসামির স্থলে ভিন্ন ব্যক্তিদের রামগঞ্জ আমলী আদালতে উপস্থিত করা হয়। পরে আদালত তাদেরকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেয়। তবে আদালতে উপস্থিত করা ভুয়া ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ঘটনাটি জানতে পেরে গত ৮ ডিসেম্বর বাদী শামছুর নেছা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আসামি সজিব ও সাইফুলকে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য ও তাদের জামিনের আদেশ বাতিল করতে আবেদন করে। একইসঙ্গে আসামিদের নিযুক্ত কৌশুলী ও স্থানীয় জামিনদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রার্থনা জানিয়েছেন।
এতে আদালতের বিচারক ঘটনাটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চায়। পরে ২৯ ডিসেম্বর আসামিদের আইনজীবী রহিম গাজী আদালতে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন। একই ব্যাখ্যা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে দিয়েছেন। এতে তিনি জানান, আইনজীবী সহকারী আবুল কাশেম দুইজন লোককে এনে আসামি হিসেবে আদালতে উপস্থিত করায়। পরে তাদেরকে জামিন করানো হয়। তিনি আসামিদের ছিনতেন না।