ভুয়া আসামি হাজির করে জামিন নিলেন আইনজীবী, অতঃপর...
লক্ষ্মীপুরে হত্যাচেষ্টা মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুই আসামি বিদেশে থাকায় ভিন্ন দুই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করে জামিন করানোর ঘটনা ঘটেছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী লুৎফুর রহমান গাজীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন আদালত।
প্রতারণার বিষয়ে মামলার বাদী শামছুর নেছা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বুধবার (০৮ জানুযারি) দুপুর ১২টায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইলের আদালতে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং লিখিতভাবে ব্যাখ্যাও জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানান বাদীর আইনজীবী রায়হান ইসলাম।
লিখিত ব্যাখ্যায় আদালতকে লুৎফুর রহমান গাজী জানান, আইনজীবীর সহকারী আবুল কাশেমের পরামর্শে মামলার ২ ও ৪ নম্বর আসামি প্রবাসে থাকার বিষয়টি গোপন রেখেছে অন্যরা। এ বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালত, আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে মারামারি এবং হত্যাচেষ্টা মামলার দুই আসামি সজীব ও সাইফুল ইসলাম শুভ বিদেশে রয়েছেন। কিন্তু প্রতারণা করে তাদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভিন্ন দুই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করে জামিন নেওয়া হয়েছে।
আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের সোন্দড়া গ্রামের আবদুল খালেকদের সঙ্গে তাজুল ইসলাম খোকাদের জমিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালে আদালতে মামলা হয়। গত ১৯ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান আদালতে চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। তারা হলেন তাজুল ইসলাম খোকা, সজীব, আনোয়ার হোসেন ও সাইফুল ইসলাম শুভ। এদিকে ঘটনা পর আসামি সজীব সৌদি আরব ও সাইফুল কাতার চলে যান।
অন্যদিকে, গত ৩০ জুন আসামি খোকা ও আনোয়ার জামিন নেন। তখন সজীব ও সাইফুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালতের বিচারক। কিন্তু গত ৬ নভেম্বর মামলার ২ ও ৪ নম্বর আসামির স্থলে ভিন্ন ব্যক্তিদের রামগঞ্জ আমলি আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত তাদের জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। তবে ভুয়া আসামিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ঘটনাটি জানতে পেরে গত ৮ ডিসেম্বর বাদী শামছুর নেছা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি সজীব ও সাইফুলকে স্বশরীরে হাজির হতে এবং তাদের জামিনের আদেশ বাতিল করতে আবেদন করেন। একই সঙ্গে আসামিদের নিযুক্ত কৌঁসুলি ও স্থানীয় জামিনদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।
এ ঘটনায় আদালত সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে আসামিদের আইনজীবী রহিম গাজী গত ২৯ ডিসেম্বর আদালতে লিখিত ব্যাখ্যা দেন। একই ব্যাখ্যা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে দিয়েছেন।
এতে তিনি জানান, আইনজীবীর সহকারী আবুল কাশেম দুজনকে এনে আসামি হিসেবে আদালতে উপস্থিত করান। পরে তাদের জামিন করানো হয়। তিনি আসামিদের চেনেন না।