রাজধানী ঢাকার ৩টি প্রধান বাস টার্মিনালে একযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) এ তথ্য নিশ্চিত করেন দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম।
অভিযান ০১ : রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় এবং জনহয়রানি সৃষ্টির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয় থেকে মহাখালী বাস টার্মিনালে আজ একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে এনফোর্সমেন্ট টিম মহাখালী বাস টার্মিনালের বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার, বিভিন্ন বাসের ড্রাইভারের সাথে কথা বলেন।
পরিদর্শনে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাসসহ লোকাল বাসগুলোর বেশিরভাগ কাউন্টারে কোনো নির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা নেই। কিছু বাস সার্ভিসে তালিকা থাকলেও প্রতি কিলোমিটার হিসেবে যে ভাড়া নির্ধারিত থাকার কথা তার চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া টানানো আছে মর্মে দুদক টিমের নিকট পরিলক্ষিত হয়। এ ছাড়া অভিযানকালে বিভিন্ন জনের নিকট বিভিন্ন রকম ভাড়া আদায় করার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এ ছাড়াও প্রতিটি গাড়িকে সিরিয়ালে ছাড়ার জন্য বাস মালিক সমিতিকে একটি পরিবহন ছাড়পত্রনামীয় ভাউচারে ‘ছাড়পত্র’ বাবদ ১১০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি টাকা দিতে হয়। বিভিন্ন বাসের ড্রাইভারদের সাথে কথা বলেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযানকালে সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনাপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অভিযান ০২ : গাবতলী বাস টার্মিনালে অনুরূপ অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে অপর একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এনফোর্সমেন্ট টিম গাবতলী বাস টার্মিনালের বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার ঘুরে দেখেন এবং বিভিন্ন পরিবহনের বাস ড্রাইভার, সুপারভাইজার এবং বাসযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এতে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাসসহ লোকাল বাসগুলো কাউন্টার থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় ২০০-৩০০ টাকা করে বিভিন্ন মালিক সমিতিকে চাঁদা প্রদান করতে হয়। এ ছাড়াও দূরপাল্লার বাসগুলো মাঝপথে যেমন সাভার, চন্দ্রা, গাজীপুর মালিক সমিতিকে, টিআই এবং সার্জেন্টকে মাসিক ভিত্তিতে /দৈনিক ভিত্তিতে একটা নির্দিষ্ট পরিমানে চাঁদা প্রদান করতে হয়। তবে এ টাকা কী প্রয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে তার কোনো তথ্য অভিযানকালে পাওয়া যায়নি, যা আত্মসাতের ইঙ্গিত বহন করে। এ ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ইজারা ভিত্তিতে দৈনিক বাসপ্রতি ৫০ টাকা করে চাঁদা তুলতে দেখা যায়। এর বৈধতা যাচাই করতে সে সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। অভিযানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনাপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অভিযান ০৩ : রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও অনুরূপ অভিযোগের প্রেক্ষিতে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। এনফোর্সমেন্ট টিম সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। টিম লক্ষ্য করে, দূরপাল্লার বাসসহ লোকাল বাসগুলো কাউন্টারে কোন নির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা নেই, একেক জনের কাছ থেকে একেক রকম ভাড়া আদায় করতে দেখা যায়। এ ছাড়া প্রত্যেকটি গাড়িকে সিরিয়ালে ছাড়ার জন্য বাস মালিক সমিতিকে একটি পরিবহন ছাড়পত্রনামীয় ভাউচারে ‘ছাড়পত্র’ বাবদ ২০০-৩০০ টাকা দিতে হয়, যেরুপ চিত্র অপর ২টি টার্মিনালেও পরিলক্ষিত হয়েছে। অভিযানকালে সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনাপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অভিযান ০৪ : বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ বিমানবন্দরের সাতটি অনুবিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের নিকট হতে বকশিশের নামে টাকা আদায়, বিমানবন্দর টার্মিনালের স্পেস ইজারা নিতে বা নবায়ণ করতে ঘুষ দাবিসহ আরও অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজ একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে এনফোর্সমেন্ট টিম কর্তৃক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ ৭টি অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রেকর্ডপত্রাদি সংগ্রহ করা হয়। প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রাদি বিশ্লেষণান্তে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।