ভূমি নামজারি ফি ১১৭০ টাকা, ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত চাইতে শুনেছি

3 hours ago 4

সর্বসাকুল্যে ভূমি নামজারি বা মিউটেশনে সরকারি ফি এক হাজার ১৭০ টাকা হলেও ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত চাওয়ার কথা শুনেছেন বলে জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ।

রোববার (২৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘জনবান্ধব ভূমিসেবায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা জানান। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) উদ্যোগে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অটোমেটেড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এএলএএমএস) আয়োজনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, মিউটেশনের ক্ষেত্রে আমাদের সব মিলিয়ে খরচ এক হাজার ১৭০ টাকা। কিন্তু এ কাজে চার লাখ টাকা পর্যন্ত চেয়েছে বলে আমি শুনেছি। এদের একটু নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য আমরা ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র করছি।

ভূমি সচিব বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ঢাকায় চারটি কেন্দ্র চালু করেছি। এজন্য আমরা তাদের ফি নির্ধারণ করে দিয়েছি। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় নির্দেশিকা করে দিয়েছি। সব জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব দেওয়া আছে, তারা নির্দেশিকা অনুযায়ী সহায়তা কেন্দ্রে উদ্যোক্তাদের নিয়োগ করতে পারবেন।

এ মুহূর্তে সারাদেশে ৮১৫টি ভূমি সহায়তা সেবা কেন্দ্র চালু রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরও অনেকগুলো পরীক্ষাধীন আছে জেলা প্রশাসকদের কাছে। এগুলো যত বাড়বে নাগরিকরা সুবিধাটা তাদের কাছে পাবে। আশপাশে ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র কোথায় আছে, সে বিষয়ে আমরা মোবাইলে লিংক করবো। এটি আমরা শিগগির উদ্বোধন করবো।

‘ভূমি সমস্যা আমাদের মতো একজনের মানুষের পক্ষে সারাজীবন চেষ্টা করলেও শেষ করা যাবে কি না সন্দেহ আছে। আমার বিরুদ্ধে প্রতিদিন কয়েক হাজার মামলা হয় সাধারণত। ভূমি নিয়ে মামলা হলে আমি যেহেতু সচিব আমার ওপরেই আসে। প্রথম প্রথম মন খারাপ হতো, এখন আমার মন খারাপ হচ্ছে না। এখন ১০ লাখের বেশি ভূমির মামলা আছে আমাদের কোর্টে।’

জনগণের দোরগোড়ায় সহজে ভূমিসেবা পৌঁছে দিতে দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নাগরিক সেবাকেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভূমি সচিব।

তিনি বলেন, ভূমি অফিসে মানুষ অনেক হয়রানির শিকার হয়। এজন্য আমরা ভূমিসেবা অনলাইনে করে মানুষের দোরগোড়ায় নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। গত ডিসেম্বর থেকে পাঁচটি অনলাইনভিত্তিক সেবা চালু করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয় একা সৎ, স্বচ্ছ ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারবে না। গণমাধ্যমসহ অন্য অংশীদারদের সহায়তা লাগবে।

সালেহ আহমেদ বলেন, আমরা অ্যাপ চালু করেছি, যার মাধ্যমে পর্চা সংগ্রহ, নকশা পাওয়া, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ—সবই ঘরে বসে করা যায়। একসময় বালু মহাল নিয়ে বিশৃঙ্খলা ছিল, এখন একটি শাখার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পুরোপুরি শৃঙ্খলা না ফিরলেও বিশৃঙ্খলা অনেকটাই কমেছে।

সেমিনারে ডিজিটাল সেবার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, অটোমেটেড ভূমি সেবার সুফল ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখন ঘরে বসে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারছেন। ফলে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৩৭৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৮৬ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, ভূমি খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি কমিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক সেবা সহজ করা। এছাড়া ভেন্ডার নির্ভরশীলতা কমানো, ডিজিটাইজ জরিপ করে নির্ভুল তথ্য নিশ্চিত করা ও সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে দুর্নীতি কমিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক সেবা সহজ করা।

অতিরিক্ত সচিব জানান, ১৬১২২ নম্বর কল সেন্টারের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হচ্ছে—দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার কল গ্রহণ করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ভূমি উন্নয়ন কর আদায় বেড়েছে ২২ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১৫৪ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে।

তিনি জানান, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৭৩ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৮৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নাগরিকরা ২৭ লাখ দাখিলা নিয়েছিলেন। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছর ৩৮ লাখ দাখিলা নিয়েছেন।

বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাসউদুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারে সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল।

এতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও পারফরমেন্স (ডিকেএমপি) অনুবিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/এমকেআর/জেআইএম

Read Entire Article