ভূমিকম্পকে ব্যবহার করছে মিয়ানমার জান্তা, ত্রাণ নিয়ে কারসাজি

1 day ago 9

মিয়ানমারে গত ২৮ মার্চ ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর থেকে ঘটনাটিকে আন্তর্জাতিক সহানুভূতির জন্য কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে দেশটির সামরিক জান্তা। জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে বিদেশি সহায়তাও চেয়েছেন।

মিয়ানমারের সরকারি হিসাব অনুসারে, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। যদিও প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক মডেল অনুসারে, নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন>>

ভূমিকম্পের কারণে দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, পাশাপাশি জান্তার ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও পরিস্থিতি অনিশ্চিত করে তুলেছে।

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র সবচেয়ে ভয়াবহ। মাইক্রোসফটের স্যাটেলাইট বিশ্লেষণ বলছে, সেখানে পাঁচ শতাধিক ভবন পুরোপুরি ধসে পড়েছে। ভূমিকম্প-আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে খাবার, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ কলেরা প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করছে। যদিও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে, রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ায় মান্দালয়ে পৌঁছাতে এখন ইয়াঙ্গুন থেকে সময় লাগছে প্রায় ১৩ ঘণ্টা—যেখানে আগে লাগতো মাত্র আট ঘণ্টা।

সেনা অভিযান অব্যাহত, ত্রাণ দিতে বাধা

প্রথম দিকে সামরিক জান্তা বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই বন্ধ না করলেও বিদ্রোহীরা মানবিক কারণে লড়াই স্থগিত করেছিল। জান্তা ২ এপ্রিল সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও এর আগেই তারা কাচিন স্বাধীনতা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত ৩০ তরুণ যোদ্ধাকে হত্যা করে। মান্দালয়ের পাশের সাগাইং অঞ্চলেও বোমাবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে অনেকে উদ্ধারকাজে অংশ নিতে চাইলেও সেনাবাহিনীর হামলার আশঙ্কায় পিছু হটছেন।

জাতিসংঘ বলছে, বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে মিয়ানমার জান্তা। গত ১ এপ্রিল চীনা রেড ক্রসের একটি ত্রাণবাহী কনভয়ে গুলি ছোড়ে সেনারা। বহরটি সেসময় বিদ্রোহী টিএনএলএ’র পাহারায় যাচ্ছিল।

ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকারীদেরও বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে। গত ৩০ মার্চ কো জয় জয় নামে একজন মেকানিক সাগাইংয়ে গিয়ে দুটি ধসে পড়া বাড়ি থেকে মানুষ উদ্ধার করতে গেলে সেনারা তাকে এবং তার দলকে তাড়িয়ে দেয়, ফলে আটকে পড়া ব্যক্তিরা মারা যান।

আরও অভিযোগ, রাজধানী নেপিদোতে তুলনামূলক কম ক্ষয়ক্ষতি হলেও ত্রাণ সাহায্যের বড় অংশ সেদিকেই পাঠাচ্ছে সামরিক জান্তা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত চীন, ভারত ও থাইল্যান্ড সীমান্ত দিয়ে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সরাসরি ত্রাণ পাঠানো। তাদের মতে, এ ধরনের দুর্যোগ আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও ত্রাণ সহায়তার ভুল ব্যবস্থাপনা ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত জান্তারই ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পারে।

কেএএ/

Read Entire Article