ভোটার তালিকা হালনাগাদের আইন-কানুনসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদের সব কার্যক্রমের প্রক্রিয়া নতুন নির্বাচন কমিশনের কাছের তুলে ধরেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। বুধবার(২৭ নভেম্বর) বিকেলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে কমিশনের সঙ্গে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ জানান, আমাদের যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ আইন আছে সে আইন অনুযায়ী প্রতিবছর ভোটার তালিকা হালনাগাদের খসড়া প্রস্তুত করে প্রকাশ করি ২ জানুয়ারি। এই খসড়া তালিকা প্রকাশ করার পর কেউ যদি মনে করে সে খসড়া তালিকা মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়নি তখন তিনি আবেদন করতে পারবে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি যদি ভোটার হওয়ার যোগ্য হয় তখন তাকে আমাদের এখানে ভোটার হিসাবে গণ্য করা হয়।
এই কাজ আমাদের শেষ করতে হয় মার্চের দুই তারিখের মধ্যে বা তার পূর্বে। কারণ দুই তারিখে এই সংশোধনী বা আমাদের ডেটাবেইজ পূর্বের যে তথ্য থাকে তার আলোকে যারা প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারিতে ১৮ বছর পূর্ণ হয় তারা ওই বছরেরই ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়। এ কাজটা আমাদের সামনে করতে এ বিষয়ে আজ আমাদের কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য আমাদের কি কি প্রস্তুতি প্রয়োজন সে প্রস্তুতি সম্পর্কে আমরা কমিশনকে অবহিত করেছি।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে ইসি সচিবালয়ের কি প্রস্তুতি আছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশন যদি আমাদের বলে তাহলে আমাদেরতো করতেই হবে। তবে আমাদের প্রস্তুতির কথা যদি বলেন তাহলে ঠিক এই মুহূর্তে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে প্রস্তুতি আছে কি না। তবে কমিশন যেভাবে চাইবেন সেভাবে আমাদের শেষ করতে হবে এবং সে প্রস্তুতি আমাদের গ্রহণ করতে হবে।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবেন কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের যে বিষয়টি নিয়ে আজ অগ্রসর হয়েছি সেটি হলো ভোটার তালিকা নিয়ে সামনে আমাদের করণীয় কি এবং বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ করতে হয় তাহলে আমাদের কি করতে হবে এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ করতে হলে আমাদের কি কি প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এর আগে আমরা যা করেছি তাও কিন্তু প্রস্তুতি এছাড়া নতুন করে আবার অনেক কিছু সংযুক্ত করতে। যার জন্য আবার প্রস্তুতি নিতে হয়। কিন্তু এমন না যে আমাদের ব্যাপক ঘাটতি আছে।
এবার যদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয় তাহলে একই সঙ্গে একাধিক বছরের তথ্য নেবেন কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সভায় আলোচনা হয়েছে আমাদের আইনগত বাধ্যবাধকতা সেটা করলে কি ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে, আগাম ১ বছরের তথ্য সংগ্রহ করলে কি প্রস্তুতি লাগবে, ২ বছরের তথ্য সংগ্রহ করলে কি প্রস্তুতি লাগবে, ৩ বছরের করলে কি প্রস্তুতি লাগবে কি পরিমাণ বাজেট লাগবে, কি পরিমাণ জনবল লাগবে, কি পরিমাণ লজিস্টিক লাগবে এগুলো সম্পর্কে আমরা কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি। আমাদের কাজ আমরা উপস্থাপন করেছি। আমরা ভোটার তালিকা হালনাগাদের সমস্ত কার্যাবলী কমিশনের তুলে ধরেছি।
বিগত সময়ে বিতর্ক ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না? জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, আপনি জানেন যে কমিশন শুরু থেকে বলছে যে, সকলেই যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে। সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তার প্রথম ধাপ হচ্ছে ভোটার তালিকার শুদ্ধতা। তাই এটা স্বাভাবিক যে এবার শুদ্ধভাবে ভোটার তালিকা করা হবে।
২০০৭-২০০৮ সালে নবম সংসদের আগে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর নতুন করে ভোটারযোগ্যরা তালিকাভুক্ত হন এবং মৃতদের বাদ দেওয়া হয় হালনাগাদে। ২০২২ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির সময় দেওয়া হয়েছিল ৩ সপ্তাহ। তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বিদ্যমান ভোটারের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। কার্যক্রম শেষে তথ্য সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নিবন্ধন হয় ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সে সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ৩ বছরে তথ্য আগাম নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এবারও তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
সবশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদ অনুযায়ী দেশে মোট ভোটার ছিল ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। যা প্রায় ১৭ কোটি মোট জনসংখ্যার ৭১.৭৪ শতাংশ।
এমওএস/এমআইএইচএস