ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হওয়া উচিত, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যে আপত্তি তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন তাহলে আবার নতুন করে ভোটার তালিকা করতে হবে। আপনি প্রধান উপদেষ্টা, প্রথমেই বলে দিচ্ছেন, ভোটারের বয়স ১৭ হলে ভালো হয়। আপনি যখন বলছেন, তখন নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এটা ইলেকশন কমিশনের কাজ, তাদের ওপর ছেড়ে দিন।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, ১৮ বছর তো আছে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। যদি কমাতে চান, সেটা ইলেকশন কমিশন প্রস্তাব করুক। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, এভাবে না বলে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টা আনা উচিত ছিল, এটা ভালো হতো। তাহলে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। মানুষের মনে এখন বেশি করে আশঙ্কা তৈরি হবে, এটা করতে গিয়ে আরও সময় যাবে, কালক্ষেপণ হবে। মানুষের মনে ধারণা তৈরি হচ্ছে, আমার না। তাদের মনে ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে, কেন যেন এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিতভাবে ও সচেতনভাবে দ্বিতীয়বারের মতো গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চেয়েছিল। এই আওয়ামী লীগ তো, সেই আওয়ামী লীগ, যার নেতা ছিল শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে গঠন করার নাম করে দেশটাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের শাসনের ও দুর্ভিক্ষের কথা তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষ ও দুঃশাসন সময়টা তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ আর নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিব। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে কখনোই বিশ্বাস করতো না, মুখে গণতন্ত্রের কথা বলতো। গুম করে হত্যা ও বিনা বিচারে হত্যা করার প্রথা প্রথম শেখ মুজিবের আমলে শুরু হয়েছে।
সংস্কার কোনো নতুন ধারণা নয়, কেউ যদি দাবি করে আমরা (এখন যারা সংস্কার নিয়ে কথা বলছেন) সংস্কার দফা নিয়ে আসছি, এটা ভুল। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সে জন্য তো নির্বাচন বন্ধ হয়ে থাকতে পারে না।। দিনের পর দিন একটি অনির্বাচিত সরকারের হাতে দেশ চালাতে দিতে পারি না, যোগ করেন ফখরুল।
সংস্কার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সংস্কার চলছে, আমরা বলছি সংস্কার চলুক, সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন করেছে সরকার, কাজ করছেন কিন্তু তারা (সরকার) কাদের সঙ্গে কাজ করছেন।
আরও পড়ুন:
- ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ করার পক্ষে ড. ইউনূস
- সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে থাকবে
- আমাদের পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই: প্রধান উপদেষ্টা
যারা সংস্কার নিয়ে কাজ করছেন তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, একই সঙ্গে জনগণের কাছে যান, তারা কি চায় জানুন। সংস্কার করেন আমাদের কোনো আপত্তি নেই। দেশে অস্থিতিশীলতা অনেকটাই কমে যাবে যদি একটি নির্বাচিত সরকার থাকে। কারণ নির্বাচিত সরকারের পেছনে জনগণ থাকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সংস্কার চাই, বেশি চাই। তবে দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। দেশের সংকট বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য এতো পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সাধারণ মানুষ চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছে না।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অনেক উপদেষ্টা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন, তারা রাজনীতিবিদদের মতো বক্তৃতা দিচ্ছেন কটাক্ষ করে। রাজনৈতিক দল আপনাদের প্রতিপক্ষ নয়, তারা আপনাদেরকে সহযোগিতা করছে, করে যাচ্ছে। আপনারাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের কথাবার্তা বলছেন না। সহযোগিতা সে ভাবে করছেন না।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শুধু কথা বলেই কাজ হবে না, কাজ করে দেখাতে হবে। সংস্কার তো সবাই চায়, সেই সঙ্গে শান্তি চাই মানুষ, বাঁচতে চায়।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার আবিদুর রহমান, আ স ম মেজবাহ উদ্দিন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি সাংগঠনিক সম্পাদক মীর আমির হোসেন আমু প্রমুখ।
কেএইচ/এসএনআর/এমএস