ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী আইন সংস্কারে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেছে নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম। যার মধ্যে আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর নারী প্রার্থীদের বাধ্যতামূলক মনোনয়ন দেওয়া।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এসব দাবি তোলেন ফোরামের প্রতিনিধিরা।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য মাহীন সুলতানের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন নারী পক্ষের নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাদাফ সায, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত ও নারী সংহতির সভাপ্রধান শ্যামলী শীল। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
ফোরামের দাবিগুলো হলো- নারী প্রার্থীর বাধ্যতামূলক মনোনয়ন, দলীয় কাঠামোতে নারীর নেতৃত্ব, নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যয়সীমার সমপরিমাণ অর্থ মঞ্জুর, অনলাইন ও অফলাইনে হয়রানি প্রতিরোধে নীতি ও নির্দেশনা, সংসদে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং সব আসনে ‘না’ ভোট রাখা।
বৈঠক শেষে মাহীন সুলতান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং অনেক বিষয়ে ভালো ফলাফল পেয়েছি আমরা। নারী ভোটার, নারী প্রার্থী ও নারী নাগরিকদের সমান মর্যাদা নিশ্চিতকরণে আমাদের দাবি ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছি। নির্বাচন কমিশনও বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নে বাধ্যবাধকতা আরোপের বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরা হয়। মাহীন বলেন, ‘আমরা সব পার্টি থেকে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থীর মনোনয়ন চাই, যাতে নির্বাচনে যথাযথ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়। আজকের আলোচনায় আমাদের চিন্তাভাবনা ও দাবিগুলো নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন
শিক্ষাবিদ-সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে ইসির সংলাপ ২৮ সেপ্টেম্বর
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপ অক্টোবরে
১৮ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, ইসির বিজ্ঞপ্তি
এরইমধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বিধানটি যুক্ত রাখা হয়েছে বলে বৈঠকে তুলে ধরে ইসি। আর আগামীতে নারী নেতৃত্ব বাড়াতে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরা হয় ফোরামের পক্ষ থেকে।
মাহীন জানান, সরাসরি নির্বাচন হয় যে সাধারণ আসনে, সেখানে তারা ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থীর মনোনয়ন চাচ্ছেন সব দল থেকে। এখন এটি আইন বা আলোচনার মধ্যে হতে পারে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে এ দাবিটি তুলে ধরেছেন। তারা মনে করছেন যে যথেষ্ট যোগ্য নারী প্রার্থী আছে এখানে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য।
ফোরামের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হলে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণে নতুন দিগন্ত খুলবে এবং নারীর প্রতি সমান মর্যাদা নিশ্চিত হবে বলে জানান তারা।
অন্যদিকে ইসি জানিয়েছে, আচরণবিধিতে নারী প্রার্থী বা ভোটারের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা হয়রানির ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং নারী প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়রানি, বিশেষ করে সাইবার সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামে যুক্ত সংগঠনগুলো হচ্ছে- ক্ষুব্ধ নারী সমাজ, গণসাক্ষরতা অভিযান, দুর্বার নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন, নাগরিক কোয়ালিশন, নারী উদ্যোগ কেন্দ্র (নউক), নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা, নারী সংহতি, নারী পক্ষ, নারীর ডাকে রাজনীতি, ফেমিনিস্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (ফ্যাব), বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র ও ভয়েস ফর রিফর্ম।
এমওএস/একিউএফ/এমএস