গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনে বিএনপি-জামায়াত কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য হেভিওয়েট প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল ইসলাম সাদিক। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা নজরুল ইসলাম লেবু। দুজনই ভোটের মাঠে কোমর বেঁধে নেমেছেন। ডা. মইনুল ইসলাম সাদিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা দিনরাত সাধারণ জনগণের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে ভোটারদের কাছে ভোটও চাচ্ছেন।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী নজরুল ইসলাম লেবু সাংগঠনিক দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের কাছে ভোট চাচ্ছেন। তাকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে জামায়াত।
এবারের নির্বাচন হবে তারুণ্যের। তরুণ ভোটাররা কোনো দলের না হয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে পারলেই জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।
এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল ইসলাম সাদিক, সাবেক ছাত্রনেতা ড. মিজানুর রহমান মিজান, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও অ্যাডভোকেট ফরহাদ হোসেন নিয়ন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রওশনারা ফরিদ, জেলা বিএনপির নেতা রফিকুল ইসলাম রফিকসহ অনেকেই।
- আরও পড়ুন
- প্রতীক পেয়ে গতি বেড়েছে জামায়াতের, প্রার্থী ঠিক করেনি বিএনপি
- বগুড়াসহ তিন আসনে লড়তে পারেন খালেদা জিয়া
একসময় এই আসনটি জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রায় দুই যুগ তাদের দখলে থাকা জাতীয় পার্টি ফ্যাসিস্ট ক্ষমতাসীনদের সাথে জোট থাকায় এখন নিষ্ক্রিয়। পৌরসভাসহ পলাশবাড়ীর ৮ ইউনিয়ন এবং সাদুল্লাপুরের ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে এই আসন গঠিত।
বিএনপির তৃণমূল নেতারা বলছেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে এ আসনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত। তবে এমপি হয়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকবে না, আত্মীয়-স্বজনসহ চিহ্নিত আওয়ামী লীগারদের প্রতিষ্ঠিত করবে এমন প্রার্থী না দিতে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন তারা।
ভোটাররা বলছেন, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ দুঃশাসন চালানোর কারণে আজ দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। আবার যদি কোনো দল সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন, জুলুম করে দুঃশাসন চালানোর পরিকল্পনা করে, সেই দলের যত ভালো প্রার্থীই হোক না কেন তাদের আর সাধারণ মানুষ ভোট দেবে না। যে দলের নেতাকর্মীর দ্বারা সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না, তাদেরই ভোট দেবে মানুষ।
বিএনপি জনগণের দল। জনগণের অধিকার আদায়ে ফ্যাসিস্ট দ্বারা দীর্ঘ ১৬ বছর নির্যাতিত হয়েছে। বিগত তিন সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি এবং ভোট চাচ্ছি। মানুষ শুধু ভোটের দিনক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছে। ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচন দিলেই বিএনপির বিজয় এ আসনে সুনিশ্চিত।
তাদের দাবি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। আর সেই প্রতিরোধ হবে ব্যালটের মাধ্যমে।
- আরও পড়ুন
- ৪২ শতাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটারই নির্ধারণ করবে জয়-পরাজয়
- ফখরুলের প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের দেলাওয়ার, আছেন স্বতন্ত্ররাও
তরুণ ভোটার কায়সার আহমেদ বলেন, আগামী নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকেই তরুণরা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করবেন। এলাকার উন্নয়নে যারা সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে তাদের পক্ষে তরুণরা ভোটের মাঠে কাজ করবেন।
আরেক ভোটার নিশাত তাজমিন বলেন, এবারের নির্বাচন হবে তারুণ্যের। তরুণ ভোটাররা কোনো দলের না হয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে পারলেই জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।
জামায়াত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে। যতদিন পর্যন্ত মানুষের অধিকার আদায় না হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা মানুষের জন্য মাঠে থাকবো। ভোটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ জামায়াতকে বিজয়ী করলে তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।
সাদুল্লাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. ছালাম মিয়া বলেন, বিএনপি জনগণের দল। জনগণের অধিকার আদায়ে ফ্যাসিস্ট দ্বারা দীর্ঘ ১৬ বছর নির্যাতিত হয়েছে। বিগত তিন সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি এবং ভোট চাচ্ছি। মানুষ শুধু ভোটের দিনক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছে। ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচন দিলেই বিএনপির বিজয় এ আসনে সুনিশ্চিত।
জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম লেবু বলেন, জামায়াত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে। যতদিন পর্যন্ত মানুষের অধিকার আদায় না হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা মানুষের জন্য মাঠে থাকবো। ভোটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ জামায়াতকে বিজয়ী করলে তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। এ আসনটি জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে সারাদেশের মানুষ চেনে। এখানে দাঁড়িপাল্লা মার্কার জয় হবে ইনশাআল্লাহ।
এই আসনটি ১৯৮৪ সালে পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৮৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছয়বার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ড. টিএম ফজলে রব্বী চৌধুরী। নিজের ব্যক্তি ইমেজ কাজে লাগিয়ে বার বার জয়ী হয়েছেন তিনি।
২০১৪ ও ২০১৮ (১০-১১তম) টানা দুবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. ইউনুস সরকার নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি নির্বাচিত হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অসহযোগ আন্দোলনে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে উম্মে কুলসুম স্মৃতিও গাঢাকা দিয়েছেন।
এই আসনে দুই উপজেলায় পুরাতন ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৮। এর মধ্য পলাশবাড়ী উপজেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৪৮৯ এবং সাদুল্লাপুর উপজেলায় ২ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬৯। এবার নতুন করে পলাশবাড়ীতে ভোটার হয়েছে ১০ হাজার ৮৪৪ আর সাদুল্লাপুর উপজেলায় ১৩ হাজার ৫৯৪। দুই উপজেলায় তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার চারজন। এ আসনে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫ লাখ ৫ হাজার ৮৯৬ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
এএনএইচএস/এসএইচএস/এএসএম