ভোটের মাঠে ধানের শীষের তিনজন, দাঁড়িপাল্লা-হাতপাখার একজন

3 weeks ago 10

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছে নাটোরের রাজনৈতিক দলগুলো। জেলার চারটি সংসদীয় আসনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগাম প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

তিন লাখ ৪৯ হাজার ৩৬৯ জন ভোটারের নাটোর-১ আসনে প্রায় প্রতিদিন তারা নির্বাচনী এলাকার দুটি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার কোনো না কোনো ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে বিভিন্ন সংগঠনের নামে আয়োজিত সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের পারিবারিক অনুষ্ঠানেও তারা যেতে শুরু করেছেন। সভা-সমাবেশের পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় অনুষ্ঠিত ইসলামি জলসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন একই পরিবারের দুজনসহ তিনজন প্রার্থী, জামায়াতের একজন, ইসলামী আন্দোলনের একজন ও এবি পার্টির একজন। যদিও নতুন দল এনসিপির নির্বাচনকেন্দ্রিক তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

অন্যদিকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকে সারাদেশের মতো নাটোরের আওয়ামী লীগ ও সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া। জাতীয় পার্টিরও তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তবে তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী।

ফজলুর রহমান পটল মারা যাওয়ার পর এই আসনে বিএনপির হাল ধরেন তার সহধর্মিণী অধ্যক্ষ কামরুন নাহার শিরিন। দল তাকে ২০১৮ সালে মনোনয়ন দিয়েছিল। এবার বয়সের কারণে তিনি ভোট করতে চান না। তিনি নিজেই নির্বাচনী এলাকার সব ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা কমিটির সভাপতি সম্পাদককে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বিএনপিতে তার মেয়ে অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলের ভালো অবস্থান রয়েছে। বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে সারাদেশে এখন তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে জেলার নেতাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সংগঠনের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক থাকায় এবার তার জন্যই দলীয় মনোনয়ন চাওয়া হবে।

জেলার লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-১ আসনে বরাবরই বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ছিল প্রায় সমানে সমান। এই আসন থেকে বার বার নির্বাচিত জেলার প্রথম প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান পটল মারা যাওয়ায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পান তার স্ত্রী ঢাকার মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যক্ষ কামরুন নাহার শিরিন। শেষ নির্বাচনে শিরিনের সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুকেও বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী তালিকায় রাখা হয়েছিল।

বয়স বিবেচনায় এবার অধ্যক্ষ কামরুন নাহার শিরিন আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান না। এবার পরিবারের সদস্যরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিএনপির মনোনয়ন পটল পরিবারে রাখতে পটল দম্পতির মেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শ কমিটির বিশেষ সহকারী ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সম্প্রতি নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পাওয়া অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলের জন্য দলীয় মনোনয়ন চাওয়া হবে।

তবে দল এ বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত হিসেবে মেনে নিয়ে নির্বাচনী এলাকার সবাই মিলেমিশে বিএনপির জন্য কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন পুতুল। পুতুলের বড় ভাই ডা. ইয়াসির আরাফাত রাজনও এই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকলেও রাজন সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশও করছেন।

এ আসনের বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক বাগাতিপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ হোসেন দলীয় এক প্রকাশ্য সমাবেশে আগামী নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় প্রার্থী ফারজানা শারমিন পুতুল হবেন বলে ঘোষণাও দিয়েছেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে এখানে আগে থেকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দলের উপজেলা আমির ও লালপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে। আবুল কালাম আজাদ নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সভা সমাবেশ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বিজয়ী হলে তার এলাকার কোনো মানুষ আর বঞ্চিত বা বৈষম্যের শিকার হবেন না বলে প্রচার করছেন। এরইমধ্যে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খানকে তার এলাকায় এনে একাধিক সভা-সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় করেছেন।

লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ পাপ্পু বলেন, ফজলুর রহমান পটল মারা যাওয়ার পর এ আসনে বিএনপির হাল ধরেন তার সহধর্মিণী অধ্যক্ষ কামরুন নাহার শিরিন। দল তাকে ২০১৮ সালে মনোনয়ন দিয়েছিল। এবার বয়সের কারণে তিনি ভোট করতে চান না। তিনি নিজেই নির্বাচনী এলাকার সব ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা কমিটির সভাপতি সম্পাদককে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বিএনপিতে তার মেয়ে অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলের ভালো অবস্থান রয়েছে। বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে সারাদেশে এখন তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে জেলার নেতাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সংগঠনের সঙ্গে তার ভালো সর্ম্পক থাকায় এবার তার জন্যই দলীয় মনোনয়ন চাওয়া হবে।

এ বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান মিষ্টু ও গোপালপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম মোলাম বলেন, ফারজানা শারমিন পুতুল তরুণ, পরিশ্রমী ও চৌকস নেতা। তাকে মনোনয়ন দিলে শত প্রতিকূলতায়ও দলের বিজয় নিশ্চিত হবে। তাই তারা পুতুলকেই প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান।

এদিকে আওয়ামী লীগের শেষ সময়ে বাগাতিপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র (অন্তর্বর্তী সরকারের বাতিল করা) বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ এ কে এম শরিফুল ইসলাম লেলিন বলেন, তারা আশা করেন এবার দলের ত্যাগী নেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী তাইফুল ইসলাম টিপুকে দল এবার মূল্যায়ন করবে। দলের জন্য তার অনেক অবদান রয়েছে। তিনি দলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। এবার দল তাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনে বিএনপির বিজয় শতভাগ নিশ্চিত। তাইফুল ইসলাম টিপু এলাকায় সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সাধারণ নেতাকর্মীদের তার পক্ষে মাঠেও সক্রিয় করে তুলছেন।

বিএনপি-জামায়াতের বাইরে এ আসনে এখনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে মাঠে ময়দানে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে না। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতা শিল্পপতি আবু তালহা এখানে একবার বিজয়ী হলেও এখন আর কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। গত নির্বাচনে এখানে তাকে বাদ দিয়ে জাতীয় পাটির প্রার্থী করা হয় ব্যারিস্টার আশিকুর রহমানকে। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে এই আসনে ভোট করতে চাইছেন মাওলানা আব্দুল্লাহিল বাকী। তিনি দলের একক প্রার্থী হিসেবে সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করছেন।

একইভাবে লালপুরের গোপালপুর পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রানা ও লালপুর থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, দলের মধ্যে তাইফুল ইসলাম টিপু অনেক ত্যাগী নেতা। তিনি দলের জন্য অনেক অত্যাচার নির্যাতন সয়েও আওয়ামী লীগের পুরো সময় মাঠে ময়দানে সক্রিয় থেকেছেন; তাকেই দলের মনোনয়ন দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে এখানে আগে থেকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দলের উপজেলা আমির ও লালপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে। আবুল কালাম আজাদ নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সভা সমাবেশ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বিজয়ী হলে তার এলাকার কোনো মানুষ আর বঞ্চিত বা বৈষম্যের শিকার হবেন না বলে প্রচার করছেন। এরইমধ্যে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খানকে তার এলাকায় এনে একাধিক সভা-সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় করেছেন।

বিএনপি-জামায়াতের বাইরে এ আসনে এখনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে মাঠে ময়দানে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে না। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতা শিল্পপতি আবু তালহা এখানে একবার বিজয়ী হলেও এখন আর কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। গত নির্বাচনে এখানে তাকে বাদ দিয়ে জাতীয় পাটির প্রার্থী করা হয় ব্যারিস্টার আশিকুর রহমানকে।

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে এ আসনে ভোট করতে চাইছেন মাওলানা আব্দুল্লাহিল বাকী। তিনি দলের একক প্রার্থী হিসেবে সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করছেন। এবি পাটি থেকে এখানে প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন দলের জেলা সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং ও বেসরকারি খাতবিষয়ক সহ-সম্পাদক এ এস এম মোকাররেবুর রহমান নাসিম।

অপরদিকে এখান থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক দুই এমপি আবুল কালাম আজাদ ও শহিদুল ইসলাম বকুল তাদের নেতাকর্মীসহ এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে এই আসনে প্রায় সব দল থেকেই তরুণ প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন এমনটা মোটামুটি নিশ্চিত।

রেজাউল করিম রেজা/এসএইচএস/এমএফএ/জেআইএম

Read Entire Article