ভোরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, সন্ধ্যায় ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি

5 hours ago 4
দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী মুসলিম দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বুধবার একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। এর আগে সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও বিমান হামলায় এক ডজনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটাই দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বুধবারের সংঘর্ষ পাকিস্তান-আফগান সীমান্তের বিতর্কিত অংশে ঘটে। গত সপ্তাহের লড়াইয়ের পর পুনরায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। এতে অন্তত ডজনখানেক মানুষের মৃত্যু হয়। এটি ছিল ২০২১ সালে তালেবান কাবুলে ক্ষমতা গ্রহণের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষ। ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পাকিস্তানি গণমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, দুই দেশ ৪৮ ঘণ্টার একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, যা বুধবার গ্রিনিচ মান সময় (জিএমটি) দুপুর ১টা থেকে কার্যকর হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই সময়ের মধ্যে উভয় পক্ষ গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে জটিল হলেও সমাধানযোগ্য এই সমস্যার একটি ইতিবাচক সমাধান খুঁজতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে। ভিন্ন দাবি দুই দেশের ইসলামাবাদ জানায়, আফগান তালেবান সরকারের অনুরোধে এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এসেছে। তবে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তানের অনুরোধ ও জোরাজুরির ফলে যুদ্ধবিরতি এসেছে। তিনি আরও জানান, প্রতিপক্ষ থেকে কোনো আগ্রাসন না চালানো পর্যন্ত আফগান বাহিনীকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাল্টা অভিযান; ইসলামাবাদ বলছে, ডজনখানেক বিদেশি ও আফগান যোদ্ধা নিহত কাবুল ও কান্দাহারে পাকিস্তানের হামলা সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও উত্তেজনার মধ্যেই আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ও কান্দাহার প্রদেশে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, এমন তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পিটিভি নিউজ। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী আফগানিস্তানের ভেতরে ‘নির্ভুল হামলা’ চালিয়েছে, যা মূলত আফগান তালেবানের হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে করা হয়েছে। সামরিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আফগান তালেবানের আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। আফগান তালেবানের গুরুত্বপূর্ণ আস্তানা সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই নির্ভুল হামলাগুলো আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশে চালানো হয়। এর ফলে আফগান তালেবানের ‘বাটালিয়ন নম্বর ৪’ ও ‘বর্ডার ব্রিগেড নম্বর ৬’ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। ডজনখানেক আফগান ও বিদেশি যোদ্ধা নিহত হয়েছে। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেকোনো বহিরাগত আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার সম্পূর্ণ সক্ষমতা ও প্রস্তুতি রাখে।’ পরবর্তীতে একটি আপডেটে পিটিভি নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, কাবুলেও হামলা চালনো হয়েছে। পিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কাবুলে ফিতনা আল-হিন্দুস্তানের কেন্দ্র ও নেতৃত্ব লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। পাকিস্তান আর্মির কাছে যেকোনো আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে। ফিতনা আল-হিন্দুস্তান হলো একটি রাষ্ট্রনির্ধারিত শব্দ, যা বালুচিস্তানের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য ব্যবহার করা হয়। নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে পিটিভি এক্স পোস্টে বলেছে, পাকিস্তান আর্মি কান্দাহার প্রদেশে আফগান তালেবান ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর নং ৪, ব্যাটালিয়ন ৮ ও বর্ডার ব্রিগেড নং ৫-কে লক্ষ্যবস্তু করেছে। পোস্টে আরও বলা হয়েছে, ‘এসব লক্ষ্যবস্তু সাবধানে নির্বাচন করা হয়েছিল, বেসামরিক জনসংখ্যা থেকে আলাদা রাখা হয়েছিল এবং সফলভাবে এসব স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। দিনের শুরুতে, পাকিস্তান ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আএসপিআর) জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী বালুচিস্তান সীমান্তে আফগান তালেবানের একটি হামলা প্রতিহত করেছে। এতে তাদের প্রায় ১৫-২০ সদস্য নিহত হয়েছে। আইএসপিআরের বরাতে বলা হয়েছে, আফগান তালেবান বুধবার ভোরের সময় স্পিন বোল্ডক এলাকায় চারটি স্থান থেকে হামলার চেষ্টা করেছিল। এই হামলা পাকিস্তানি বাহিনী কার্যকরভাবে প্রতিহত করেছে। আজকের (বুধবার) সংঘাত হলো এক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম সংঘর্ষ। এর আগে গত রাতে কুরমে সংঘটিত ঘটনা ও শনিবার রাতে শুরু হয়ে রোববার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে হওয়া সংঘর্ষের পরে এটি ঘটেছে। আইএসপিআরের বরাতে জানা যায়, আফগান তালেবান সীমান্তের ওপার থেকে পোস্টগুলোতে হামলা চালানোর পর পাকিস্তানি বাহিনীর ২৩ সেনা নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছে।  সামরিক মিডিয়া শাখা আরও জানিয়েছে, বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য ও ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২০০-এর বেশি তালেবান ও সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা আরো বেশি। আফগানিস্তান দাবি করেছে যে তারা ‘প্রতিশোধমূলক’ এই হামলা চালিয়েছে। ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে আফগান ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালানোর অভিযোগ এনেছে। অন্যদিকে ইসলামাবাদ এ নিয়ে নিশ্চিত করেনি যে তারা বিমান হামলার পেছনে আছে কি না, তবে পাকিস্তানের নিজের আত্মরক্ষা করার অধিকার ও সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছে। সংঘর্ষের মূল কারণ সম্প্রতি দুই সাবেক মিত্র দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয় যখন পাকিস্তান অভিযোগ তোলে, আফগানিস্তান থেকে আশ্রয় নিয়ে সক্রিয় জঙ্গিরা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। ইসলামাবাদ দাবি করে, তালেবান প্রশাসন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অন্যদিকে তালেবান প্রশাসন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা পাল্টা অভিযোগ তোলে যে পাকিস্তান ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়ে ও সীমান্তে উসকানি দিয়ে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাইছে। তালেবান আরও অভিযোগ করে, পাকিস্তান আইএসআইএস-খোরাসান (আইএসআইএস-কে) সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে, যা আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, আইএসআইএস-খোরাসানই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলার জন্য দায়ী।
Read Entire Article