ভ্যান হারিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে দিন কাটছে আরিফের

2 hours ago 2

মঙ্গলবার সকাল ১১টা। বাগেরহাট জেলা আদালত মসজিদের একটু দূরে বুক চেপে আর্তনাদ করছিলেন আরিফ শেখ (৩৫) নামে এক যুবক। কাছে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে কান্না বেড়ে যায় আরও। কিছুসময় পরে জানান উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ভ্যানটি চুরি হয়ে গেছে এই আদালত এলাকা থেকে।

আরিফ জানান, ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি কিনেছিলেন তিনি। ভ্যান হারিয়ে সপ্তাহের কিস্তি কীভাবে দেবেন আর ছেলে-মেয়েদের মুখে খাবার দেবেন কীভাবে সেই চিন্তায় একটু পর পর আল্লাহ আল্লাহ বলে চিৎকার করছিলেন তিনি।

হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আরিফ বলেন, ‘ভ্যানটি কিনতে কত কষ্ট করেছি। কেনার ছয় মাসের মধ্যে চুরি হয়ে গেলো। এই ভ্যানের ওপরই আমার সংসার চলে। দশ মিনিটের জন্য একটু ওপরে গেছিলাম এসে দেখি ভ্যান উধাও। এখন খাবো কীভাবে আর কিস্তি দিবো কী দিয়ে তা ভেবেই কূল পাচ্ছি না।’

তিনি জানান, ঘটনার পর দুই ভাই মিলে শহরের অলিগলি, বাস স্ট্যান্ড, এমনকি পাশের উপজেলা ফকিরহাট পর্যন্ত খুঁজেছেন। কিন্তু কোনো খোঁজ মেলেনি। আদালত চত্বরে থাকা সিসি ক্যামেরা নষ্ট থাকায় চুরির কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

বাগেরহাট পৌরশহরের বাসাবাটি এলাকার হারুন শেখের ছেলে আরিফ শেখ। ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে চার সদস্যের পরিবার তার। নিজের বলতে কিছুই নেই। শহরের একটি ছোট্ট ভাড়া বাসায় থাকেন। রোদ বা বৃষ্টিতে সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যা আয় হতো, তাতেই চলত সংসার।

খোঁজ নিতে শুক্রবার আরিফের বাড়িতে গেলে সেখানে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। এর মধ্যে আমিনুল ইসলাম নামের এক মুদি দোকানি বলেন, ‘আরিফ খুব ভালো ছেলে। দিনরাত ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতো। ওর ভ্যান চুরি হয়ে যাওয়ায় খুব খারাপ লাগছে। ভ্যানটি হারিয়ে পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সামর্থ্যবান মানুষেরা যদি আরিফকে সাহায্য করে তাহলে ও আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’

আরিফের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঠিকমতো খেতে পারছি না। কিস্তির স্যারেরাও বাসায় এসে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। পাশের বাড়ি থেকে দুই কেজি চাল এনে, আলু ভর্তা করে দুদিন ধরে খাচ্ছি। গরিবের কপাল এত খারাপ কেনো হয়, বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।’

আক্ষেপ নিয়ে আরিফ এদিন বলেন, ‘বাবা হয়ে ছেলে-মেয়ের মুখে তিনবেলা খাবার তুলে দিতে পারছি না। আমার চেয়ে হতভাগা আর কে আছে? কেউ যদি আমার ভ্যানটা ফিরিয়ে দিত, আমি নতুন করে জীবন শুরু করতে পারতাম।’

নাহিদ ফরাজী/এমএন/এএসএম

Read Entire Article