ভ্রমণ মানেই আনন্দ, মানসিক শান্তি আর নতুন অভিজ্ঞতার সন্ধান। তবে ভ্রমণে বের হওয়ার আগে ব্যাগ গোছাতে গিয়ে সবার মাথায় ঘুরপাক খায় একটি সাধারণ প্রশ্ন—কত জোড়া জুতা নেওয়া উচিত? কেউ একজোড়া নিয়েই স্বস্তি বোধ করেন। আবার কেউবা অর্ধেক আলমারিই ব্যাগে ভরে ফেলেন। পরে গিয়ে দেখা যায়, অতিরিক্ত বোঝা বইতে হয় তাকেই। অথচ ভ্রমণের ধরন, সময়কাল এবং মৌসুম অনুযায়ী সঠিকভাবে পরিকল্পনা করলে সহজেই নির্ধারণ করা যায় কত জোড়া জুতা নেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমেই ভাবতে হবে আপনি কেমন ভ্রমণে যাচ্ছেন? যদি গন্তব্য হয় পাহাড়ি এলাকা, ট্রেকিং বা জঙ্গল সাফারি, তবে মজবুত ও আরামদায়ক ট্রেকিং জুতা বা স্নিকার্স অপরিহার্য। সমুদ্রসৈকতে ঘোরার পরিকল্পনা থাকলে ফ্লিপ-ফ্লপ বা স্যান্ডেল সবচেয়ে ভালো সঙ্গী। শহরভিত্তিক ভ্রমণে হালকা ও স্টাইলিশ স্নিকার্স বা ক্যাজুয়াল জুতাই যথেষ্ট। তবে একেকটি ভ্রমণ একেবারে একই ধরনের হয় না। কোথাও পাহাড়, কোথাও সমুদ্র আবার কোথাও শহর। তাই ভিন্ন পরিস্থিতি মাথায় রেখে জুতার সংখ্যা ঠিক করতে হয়।
ভ্রমণে অন্তত দুই জোড়া জুতা নেওয়া উচিত। একটি হবে হাঁটার জন্য উপযোগী, আরেকটি হবে আরামদায়ক বিকল্প। সারাদিন ঘোরাঘুরি শেষে যদি পা ক্লান্ত হয়ে যায়; তখন স্যান্ডেল পরে বাইরে বের হওয়া অনেকটা স্বস্তি দেয়। আবার একটি জুতা ভিজে গেলে বা নষ্ট হলে বিকল্প জুতা কাজে আসে। কয়েক দিনের ছোট ভ্রমণ হলে দুটি জুতাই যথেষ্ট। যদি দীর্ঘ ভ্রমণ হয়, যেমন সাত দিন বা তারও বেশি, তাহলে তিন জোড়া নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সাধারণত একটি ট্রেকিং বা হাঁটার জুতা, একটি স্যান্ডেল বা ফ্লিপ-ফ্লপ এবং একটি ক্যাজুয়াল বা ফরমাল জুতা সঙ্গে রাখাই যথাযথ।
মৌসুমভেদেও জুতার প্রয়োজনীয়তা বদলে যায়। বর্ষাকালে বের হলে জলরোধী স্যান্ডেল বা ফ্লিপ-ফ্লপ অবশ্যই নিতে হবে। কারণ চামড়া বা কাপড়ের জুতা ভিজে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শীতে উষ্ণ আরামদায়ক স্নিকার্স বা বুট চাই, যা ঠান্ডা থেকে সুরক্ষা দেবে। গ্রীষ্মে চাই হালকা ও বাতাস চলাচল করে এমন জুতা, যাতে ঘাম জমে পা অস্বস্তিকর না হয়। এভাবে মৌসুমের সঙ্গে মানানসই জুতা বেছে নিলে ভ্রমণ আরও আরামদায়ক হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন
অনেকেই মনে করেন, বেশি জুতা নিলে প্রতিদিন নতুন লুক তৈরি করা যাবে, ছবিতেও ভিন্নতা আসবে। কিন্তু ব্যাগে জুতার সংখ্যা বাড়লে ওজনও বাড়ে, যা ভ্রমণে বিরক্তির কারণ হয়। তাই চেষ্টা করা উচিত বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী জুতা নেওয়ার। যেমন কালো বা সাদা রঙের স্নিকার্স প্রায় সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। একই জুতাকে বারবার বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করাই স্মার্ট ভ্রমণকারীর কৌশল।
জুতার সঙ্গে কিছু বাড়তি খেয়ালও রাখা দরকার। ব্যাগে জায়গা বাঁচাতে জুতার ভেতর মোজা, চার্জার বা ছোটখাটো জিনিসপত্র ভরে রাখা যায়। এতে শুধু জায়গা সাশ্রয়ই হয় না বরং জিনিসপত্রও সঠিকভাবে গুছিয়ে রাখা সম্ভব হয়। আবার জুতাকে আলাদা ব্যাগে রাখলে অন্য জামাকাপড় ময়লা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না। ভ্রমণের সময় অতিরিক্ত ফ্যাশনেবল বা ভারী জুতা নেওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এসব জুতা আরাম কমিয়ে দেয়। দীর্ঘ ট্রেন বা বিমানের যাত্রায় এমন জুতা পরা ভালো, যা সহজে খোলা-পরা যায়।
ছেলেদের জন্য ন্যূনতম একটি স্নিকার্স ও একটি স্যান্ডেল যথেষ্ট। দীর্ঘ ভ্রমণ হলে সঙ্গে ক্যাজুয়াল ফরমাল জুতা রাখা যেতে পারে। মেয়েদের জন্য আরামদায়ক স্নিকার্স, একটি ফ্লিপ-ফ্লপ বা স্যান্ডেল আর প্রয়োজনে একটি ফ্যাশনেবল জুতা যথেষ্ট। তবে হাই হিল নেওয়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়া ভালো। কেননা এটি আরামের চেয়ে কষ্টই বেশি দেবে। শিশুদের জন্য একটি আরামদায়ক স্নিকার্স ও একটি স্যান্ডেলই যথেষ্ট। তাদের জন্য বেশি জুতা নেওয়ার প্রয়োজন নেই বরং ব্যাগে অযথা বাড়তি ওজন তৈরি করে।
আসলে ভ্রমণে কত জোড়া জুতা নেওয়া উচিত, তার কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে ভ্রমণের ধরন, সময়কাল, মৌসুম ও ব্যক্তিগত চাহিদার ওপর। তবে অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীদের মতে, সর্বোচ্চ তিন জোড়া জুতা সঙ্গে থাকলেই যে কোনো পরিস্থিতি সামলানো যায়। ব্যাগ হালকা থাকে, আবার আরাম ও প্রয়োজনীয়তাও মিটে যায়। তাই ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে চাইলে সঠিক পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ তিন জোড়া জুতা নিয়েই বের হওয়া যথেষ্ট।
এসইউ/এমএস