ভ্রমণে সার্ম এল শেইখ
নভেম্বরের অন্ধকার নর্ডিক দেশগুলোর মানুষের মনে এক ধরনের হতাশার ছবি আঁকে। প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস, তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়া কিংবা আবার বাড়ার অস্থিরতার ফলে তুষারপাতের বদলে হয় বৃষ্টিপাত, সব মিলিয়ে এই সময়টা বিষণ্ণতার দিকে ঠেলে দেয়। এমন সময় পৃথিবীতে খুব কম দেশই খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে তাপমাত্রা এখনও বিশ থেকে ত্রিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে, বিশেষ করে আমাদের মতো যারা সুইডেনে বসবাস করি তাদের কাছে এটি যেন এক স্বপ্নময় আশ্রয়। স্বাভাবিকভাবেই ছুটির দিনগুলো কাটাতে চাই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে। তাই বেছে নিতে হয় কোথায় যাব, কীভাবে যাব, আগে সেখানে যাওয়া হয়েছে কি না। যদি প্রথম ভ্রমণ হয় তবে উচ্ছ্বাস আর জল্পনা কল্পনার ভেতর দিয়েই কেটে যায় প্রস্তুতি। খাবারের স্বাদ কেমন হবে, পরিবেশ আরামদায়ক কি না, ভিসার ঝামেলা আছে কি না, সেই দেশের মানুষের নৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ কেমন, দুর্নীতি বা নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন, এসবই টুডু লিস্টের অংশ হয়ে ওঠে। তারপর আসে পারিবারিক সিদ্ধান্ত। এবারের ছুটি আমরা বেছে নিয়েছি রেড সি’র নীল লবণাক্ত জলের তীরে PICKALBATROS Golf Beach and Resort, Sharm El Sheikh, Egypt এ।
নভেম্বরের অন্ধকার নর্ডিক দেশগুলোর মানুষের মনে এক ধরনের হতাশার ছবি আঁকে। প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস, তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়া কিংবা আবার বাড়ার অস্থিরতার ফলে তুষারপাতের বদলে হয় বৃষ্টিপাত, সব মিলিয়ে এই সময়টা বিষণ্ণতার দিকে ঠেলে দেয়। এমন সময় পৃথিবীতে খুব কম দেশই খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে তাপমাত্রা এখনও বিশ থেকে ত্রিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে, বিশেষ করে আমাদের মতো যারা সুইডেনে বসবাস করি তাদের কাছে এটি যেন এক স্বপ্নময় আশ্রয়।
স্বাভাবিকভাবেই ছুটির দিনগুলো কাটাতে চাই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে। তাই বেছে নিতে হয় কোথায় যাব, কীভাবে যাব, আগে সেখানে যাওয়া হয়েছে কি না। যদি প্রথম ভ্রমণ হয় তবে উচ্ছ্বাস আর জল্পনা কল্পনার ভেতর দিয়েই কেটে যায় প্রস্তুতি। খাবারের স্বাদ কেমন হবে, পরিবেশ আরামদায়ক কি না, ভিসার ঝামেলা আছে কি না, সেই দেশের মানুষের নৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ কেমন, দুর্নীতি বা নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন, এসবই টুডু লিস্টের অংশ হয়ে ওঠে। তারপর আসে পারিবারিক সিদ্ধান্ত।
এবারের ছুটি আমরা বেছে নিয়েছি রেড সি’র নীল লবণাক্ত জলের তীরে PICKALBATROS Golf Beach and Resort, Sharm El Sheikh, Egypt এ। মিশরের সার্ম এল শেইখ দেখতে এশিয়ার মানচিত্রে হলেও দেশটি আফ্রিকার অন্তর্ভুক্ত। এই ভৌগোলিক বৈপরীত্য যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আকর্ষণীয় এখানকার আবহাওয়া। সারাবছরই উষ্ণ রোদ আর শান্ত সমুদ্রের জন্য পর্যটকদের ভিড় জমে।
সম্প্রতি রাশিয়ার সাধারণ মানুষের জন্য বিশ্ব ভ্রমণ সীমিত হয়ে পড়ায় তারা তুরস্ক ও মিশরের দিকে ঝুঁকছে। মজার বিষয় হলো ইউক্রেন থেকেও পর্যটকদের উল্লেখযোগ্য ভিড় রয়েছে এখানে। এই দৃশ্য দেখে মনে হলো পৃথিবীর প্রকৃত দেশপ্রেমিকেরা সাধারণ মানুষ। দেশের জন্য যুদ্ধ করে জীবন দেয় তারাই। ধনী এবং ক্ষমতাবানরা যুদ্ধের প্রথম ধাক্কায় দেশ ছেড়ে পাশের দেশে আশ্রয় নেয়, পরে শান্তি ফিরলে আবার দেশে ফিরে শাসন এবং শোষণের চাকা ঘোরায়।
যাই হোক, এই গভীর রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে দূরে আমরা এসেছি বিশ্রাম নিতে। তাই আমাদের ছুটি আলোতেই মন ভরে উঠুক। সার্ম এল শেইখের নীল সমুদ্র, উষ্ণ বাতাস আর অনাবিল শান্তি নিয়েই চলুক আমাদের দিনের গল্প।
সমুদ্র আর মরুর মিলন যেখানে চোখে পড়ে সেখানেই শার্ম এল শেইখের আসল সৌন্দর্য। জায়গাটির রূপ শুধু ছবি বা বর্ণনায় ধরা যায় না। যেসব কথা শুনেছিলাম সেগুলো আমাকে আগেই আকৃষ্ট করেছিল। মনে হয়েছিল এই শহর যেন ভ্রমণকারীদের জন্য সাজানো এক খোলা স্বর্গ। তাই ভাবলাম দেখি তো সবাই যেসব জায়গার কথা বলে সেগুলো কেমন।
রাস মোহাম্মদ ন্যাশনাল পার্ক
প্রথমেই গেলাম রাস মোহাম্মদ ন্যাশনাল পার্কে, যাকে অনেকে শার্ম এল শেইখের প্রাণ বলে। নীল স্বচ্ছ পানি আর রঙিন প্রবাল দ্বীপ যেন প্রকৃতির হাতে আঁকা চিত্র। পানির নিচে তাকালে মনে হয় যেন অন্যগ্রহ। মাছগুলো রঙধনুর মতো ঝলমল করে। কখনো কাছেই কচ্ছপ ভেসে উঠে, দূরে ডলফিনও দেখা যায়। সকালে হোটেল থেকে নিয়ে গেলো, তারপর সারাদিন সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো, কখনো বোটে, কখনো সাঁতারে, কখনো স্নরকেল, আবার কখনও বোটে পিকনিক এবং শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই রেখে গেলো হোটেলে।
বেশ ক্লান্ত লাগছিল, তবু ডিনার সেরে গেলাম নামা বে। এলাকাটি যেন শহরের হৃদস্পন্দন। সমুদ্রের ধারে সোনালি আলো, দোকান, ক্যাফে আর মানুষের হাসি মিলেমিশে এমন এক উষ্ণ পরিবেশ তৈরি করলো যে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়েছিল আরও অনেকক্ষণ। রাত যেন এখানে ঘুমায় না, কিন্তু আমরা হোটেল এসে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম তিরান আইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে।
তিরান আইল্যান্ডে যাওয়া মানেই আরেক পৃথিবী দেখা। নীল পানির ওপর ভাসমান নৌকা আর নিচে রঙিন সামুদ্রিক জীবন। স্নরকেল করে মনে হলো পানির নিচে একটি নীরব শহর যেখানে সবকিছু শান্ত, ধীর আর সৌন্দর্যময়। আজ বেশ আর্লিই হোটেলে ফিরেছি, সন্ধ্যার ডিনার হবে কিছু ব্রিটিশ বন্ধুদের সঙ্গে।
শুক্রবার ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম ওল্ড মার্কেটে। ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মশলার সুগন্ধি আর পুরোনো মিশরীয় বাজারের অনুভূতি জাগলো। দোকানিদের হাসিমুখ আর আতিথেয়তা আমাদের নিয়ে গেলো অন্য যুগে। এই ওল্ড মার্কেটের মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে মহিমান্বিত আল সাহাবা মসজিদ। বিশাল গম্বুজ আর মিনারগুলো সন্ধ্যায় আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে। সামনে দাঁড়িয়ে মনে হলো যেন সময় থেমে গেছে। আমরা এখানে কিছু সময় কাটিয়ে পরে বাইরের পরিবেশে ডিনার সেরে হোটেলে ফিরে এলাম। আসার পথে ভাবনার জগতে গিয়েছিলাম, মরুভূমির এক শহর থেকে অন্য শহরে অতীতে মানুষ কী না পরিশ্রম করে আশা তৈরি করতো।
ভাবলাম সুইডেনে ফেরার আগে একদিন বিকেলে মরুর সাফারি ভ্রমণ করব। যে কথা সেই কাজ, ধুলোর ঝড়, কোয়াড বাইকের গর্জন, দূরে সোনালি পাহাড় আর আকাশের নরম আলো। সূর্য ঢলে পড়লে বেদুইনদের চা আর গান শুনতে শুনতে মনে হলো পৃথিবীর আর কোথাও এমন শান্তি নেই। রাতের তারাভরা আকাশ দেখে মনে হলো হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলব। সময়টি সুন্দর এবং অসাধারণ একটি অনুভূতিতে ভরপুর ছিল।
পরিবার নিয়ে যারা আসেন তাদের জন্য ডলফিনা পার্ক বিশেষ আনন্দের। ডলফিন শো, সাবমেরিন ট্যুর, প্যারাসেইলিং, কাচের নৌকা, সব মিলিয়ে সম্পূর্ণ সমুদ্র বিনোদনের অভিজ্ঞতা।
ছুটির দিনগুলো শেষ হতে চলেছে, দেখার নাই তো শেষ। মনে পড়ে গেলো সাইনাই পাহাড়ের কথা। প্রায় তিন ঘণ্টার জার্নি, পরেরদিন সকালে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম সেখানে।
রহমান মৃধা, গবেষক এবং লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন, [email protected]
এমআরএম/জেআইএম
What's Your Reaction?