‘মনে হয় সকালে এসে দেখবো বিদ্যালয়টি আর নেই’

6 hours ago 5

বরগুনার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি গ্রামের বুক চিরে বয়ে চলেছে বিষখালী নদী। সেই নদীর লাগাতার ভাঙনে বিলীন হতে বসেছে এলাকার একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাইক্লোন শেল্টার কালিকাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

দুর্যোগের সময় আশ্রয়ের জায়গা ও শিশুদের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হারানোর আশঙ্কায় এখন আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের। তবে ভবনটি রক্ষায় দুই কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক দশক ধরে বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে শত শত একর জমি, ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। হারিয়ে গেছে একাধিক স্কুল-মাদরাসা ও মসজিদ। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি ২০০৯ সালে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবনসহ সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তবে মাত্র দেড় দশক না যেতেই নদীর লাগাতার ভাঙনে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদী এসে ঠেকেছে বিদ্যালয়ের দোরগোড়ায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

‘মনে হয় সকালে এসে দেখবো বিদ্যালয়টি আর নেই’

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালিকাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিষখালী নদীর দূরত্ব এখন মাত্র ৫০ ফুট। বিদ্যালয়ের সামনের কালিকাবাড়ি-ফুলঝুড়ি সড়কটি এরইমধ্যে বিলীন হয়েছে বিষখালী নদীতে, ফলে জল-কাদা মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অব্যাহত ভাঙনের কারণে প্রতিদিন জোয়ারের পানি আর নদীর গর্জনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে শিক্ষার্থীদের মনে, ৩০০ শিক্ষার্থী থেকে কমতে কমতে এখন আছেন মাত্র ৭০ জন। দুর্যোগের সময় আশ্রয় নেওয়ার জন্য নির্মাণ করা এই বিদ্যালয়টি নিজেই এখন খুঁজছে নিরাপদ আশ্রয়।

কালিকাবাড়ি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম জাহান জাগো নিউজকে জানায়, ‘আমার বাসা এই বিদ্যালয়ের কাছাকাছি, তাই এই বিদ্যালয় ছাড়া আমার আর পড়ার কোনো জায়গা নেই। আমরা খুব কষ্ট করে ক্লাসে আসি। এখানে আসার জন্য সাঁকো পার হতে হয়। অতিরিক্ত জোয়ার হলে স্কুলে আর আসা যায় না। আমাদের এই একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সবাই রক্ষা করুন।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখানে পুরাতন স্কুল ভবনটি এই স্থান থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ছিল। পরে ভাঙন শুরু হলে নিরাপদ স্থান বিবেচনা করে এই স্থানে বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নদীর ভাঙন এতটাই তীব্র যে, এখানে রিংবাঁধ ভেঙে এখন বিদ্যালয়ের ৫০ ফুট সামনে নদী চলে এসেছে। এটি আমাদের এলাকার একমাত্র ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানাই।’

‘মনে হয় সকালে এসে দেখবো বিদ্যালয়টি আর নেই’

দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভাঙন শুরু হওয়ার পর থেকেই আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডে একাধিকবার লিখিত আবেদন করেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনোমতে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি। নদী আরও একটু এগোলে ভবনটিও নদীতে তলিয়ে যাবে। মাঝে মাঝে মনে হয় সকালে এসে দেখবো বিদ্যালয়টি আর নেই।’

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ছালেহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নদীর ভাঙনে বিদ্যালয়টি এখন হুমকির মুখে আছে। এ কারণে শিক্ষার্থীও কমে গেছে। আমরা বিদ্যালয়টি রক্ষায় বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। ভাঙন রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল হান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘কালিকাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার ভবন ও ওই এলাকার ভাঙন কবলিত নদীর পাড় রক্ষায় প্রায় দুই কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে, অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে দ্রুতই।’

এফএ/জেআইএম

Read Entire Article