সপ্তাহের সাত দিনের মাঝে মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র, মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ দিন হচ্ছে জুমা। এই দিনটিকে আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন। পৃথিবীতে সূর্য উদিত হওয়া দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় দিন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং রাসুল (সা.) । শুধু তাই নয়, এই দিনে মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে বিশেষ কিছু করণীয়, যা পালন করলে মিলবে অপার সওয়াব ও পরকালীন সফলতা।
জুমার দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো, আজানের সঙ্গে সঙ্গে আগেভাগে মসজিদে গমন করা। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে চলো এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম—যদি তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা জুমআ : ৯)
এই আয়াত আমাদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা যে, আজান হওয়া মাত্রই দুনিয়াবি কাজকর্ম বাদ দিয়ে আল্লাহর ঘরে চলে যেতে হবে। শুধু নামাজ পড়লেই হবে না, বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে পৌঁছানোই কাম্য। কেননা, রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে এমন এক পুরস্কারের কথা বলেছেন, যা কোরবানির সওয়াবের সঙ্গে তুলনীয়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মতো গোসল করে এবং প্রথম প্রহরে মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। দ্বিতীয় প্রহরে গেলে গরু কোরবানির সওয়াব, তৃতীয় প্রহরে গেলে ভেড়া, চতুর্থ প্রহরে গেলে মুরগি এবং পঞ্চম প্রহরে গেলে ডিম কোরবানির সওয়াব পাবে। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে মিম্বারে ওঠেন, তখন ফেরেশতারা আর আমল লিখেন না, তারা খুতবা শুনতে থাকেন। (বোখারি : ৮৮১)
তবে আমাদের সমাজে অনেকেই জুমাবারে বেশ দেরি করে মসজিদে যান। এ সময় কেউ কেউ আগে আসা মুসল্লিদের কাঁধ ডিঙিয়ে সামনের কাতারে বসার চেষ্টা করেন। অভিযোগ আছে, অনেক মসজিদের মুতওয়াল্লিরা তাদের জন্য জুমার দিন সামনের কাতারে আলাদা করে জায়গা জুড়ে রাখেন।
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লা বলেন, জুমার দিনে কেউ মসজিদে এসে যদি মানুষের কাঁধ ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে সামনে যায়, নবী করিম (সা.) জাহান্নামের ব্রিজ অতিক্রম করে জাহান্নামে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। অতএব এই কাজটি কখনো করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, মসজিদে যে আগে আসবে সে আগে বসবে। এখানে আগে থেকে জায়গা দখল করে রাখা অথবা কাউকে ডিঙিয়ে সামনে গিয়ে সম্পূর্ণ না জায়েজ এবং গোনাহের কথা।
হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) জুমার দিন আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার জন্য যে সব আমলের কথা বলেছেন, মসজিদে মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে না যাওয়া সেগুলোর একটি। তিনি (সা.) বলেন,যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামাজ আদায় করে, ইমাম যখন খুতবার জন্য বের হন তখন চুপ থাকে, তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বোখারি : ৯১০)
অন্য এক হাদিসে এসেছে, একবার রাসুল (সা.) জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। তার চোখে পড়ল এক ব্যক্তি মানুষকে ডিঙিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি তাকে বললেন, ‘বসে পড়, তুমি দেরি করে এসেছ, মানুষকে কষ্টও দিচ্ছো।’ (আবু দাউদ : ১১১৮)
সুতরাং ইমামের কাছাকাছি বসার জন্য মসজিদে দ্রুত উপস্থিত হতে হবে। যদি কোনো কারণে দেরি হয়ে যায়, তাহলে যেখানে জায়গা খালি থাকে সেখানেই বসে পড়ুন। ইমামের কাছাকাছি বসার জন্য অন্যদের কষ্ট দিলে সওয়াবের বদলে গোনাহের ভাগীদার হতে হবে।