মহাকবির স্মৃতিচিহ্ন বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই

3 hours ago 9

‘কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি’ কবিতার চরণটি সেই বিখ্যাত ‘আযান’ কবিতার। যার লেখক মহাকবি কায়কোবাদ। প্রকৃত নাম মুহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী। ১৯০৪ সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধকে উপজীব্য করে লেখেন মহাকাব্য ‘মহাশ্মশান’। ২৫ ফেব্রুয়ারি এই মহাকবির ১৬৮তম জন্মবার্ষিকী।

কায়কোবাদ ১৮৫৭ সালের এই দিনে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জের আগলা ইউনিয়নের আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শাহামাতুল্লাহ আল কোরেশী ছিলেন ঢাকা জেলা জজ কোর্টের একজন আইনজীবী। কায়কোবাদ সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পিতার অকালমৃত্যুর পর তিনি ঢাকা মাদ্রাসায় (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) ভর্তি হন। যেখানে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়ে পোস্ট মাস্টারের চাকরি নিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। যেখানেই তিনি অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন।

বাংলা সাহিত্যে ব্যাপক অবদানের জন্য মহাকবি কায়কোবাদ সারা দেশের মানুষের কাছে সমাদৃত। তবে জন্মস্থান ঢাকার নবাবগঞ্জে এখনো অবহেলিত। নিজ গ্রামে কবির স্মৃতিচিহ্ন বলতে তেমন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। কয়েকটি সংগঠনই শুধু স্মরণে রেখেছে মহাকবিকে। এর মধ্যে মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি সংসদ, মহাকবি কায়কোবাদ মুক্ত স্কাউট গ্রুপ ও ‘কায়কোবাদ ডটকম’ কায়কোবাদকে জানুন সংগঠন অন্যতম।

মঙ্গলবার সকালে মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে কবির সমাধিস্থল ঢাকার আজিমপুর পুরোনো কবরস্থানে কবর জিয়ারত করা হবে। তা ছাড়া নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কবির আলোচনা সভা ও কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করেছে ‘কায়কোবাদ ডটকম’ কায়কোবাদকে জানুন সংগঠনটি। এ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কবির বসতভিটায় সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সবকিছু বিকিকিনি করে চলে গেছেন তার ছেলে, নাতি-পুতিরা। বাড়িতে প্রবেশের আগেই চোখে পড়ে মহাকবি কায়কোবাদের নামের বিদ্যালয়। তার পাশেই আছে কায়কোবাদ যে পোস্ট অফিসে কাজ করতেন সেই পোস্ট অফিসটি। কিছুদূর যেতেই চোখে পড়ে রাস্তার পাশে একটি ভাঙা ঘর। অনেকে বলেন, এটিই কায়কোবাদের ঘর। সেটিও দখল করে রেখেছে সমাজকল্যাণ কেন্দ্র নামে একটি সংস্থা। সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘আগলা পূর্বপাড়া সমাজকল্যাণ কেন্দ্রের জমিদাতা মো. নুরুল ইসলাম’। বর্তমানে জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান।

যারা কবির বাড়িতে বসবাস করছেন তারা বলেন, আমরা জমি কিনে বাড়িঘর করেছি। আমাদের সবকিছুর দলিল আছে। সরকার যদি মহাকবির জন্য কিছু করে, তাহলে আমাদের পুনর্বাসন করে দিলে আমরা তার বাড়িঘর ছাড়তে রাজি আছি। আমরাও চাই মহাকবি আমাদের থেকে শুরু করে পরের জন্মের মাঝেও বেঁচে থাকুক।

মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি সংসদের অন্যতম সদস্য, ইতালি প্রবাসী বিষ্ণুপদ সাহা বলেন, ‘কবি কায়কোবাদ নিজ এলাকায় কতটা অবহেলিত, তার এলাকায় না এলে কেউ বুঝতে পারবে না। সারা বাংলাদেশের মানুষ তাকে চেনে, অথচ তার নামে একটা সড়কের নামকরণও করা হয়নি। মহাকবি কায়কোবাদের স্মৃতি বলতে কিছুই নেই। আমরা কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। বাড়ি আছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে কায়কোবাদের ওঠানো ঘরও নেই। সবই এখন মানুষের দখলে।’

কবির গ্রাম, আগলা পূর্বপাড়ার বাসিন্দা কামরুজ্জামান কামরুল জানান, মহাকবি কায়কোবাদ নবাবগঞ্জের গর্ব। বাড়ির সামনে যে মসজিদের আজান শুনে কবি ‘আযান’ কবিতাটি লিখেছিলেন, সেটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে। বাড়িটি দখলমুক্ত করে কবির নামে একটি পাঠাগার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা জরুরি। এটা হলে কবি সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে।’

মহাকবির পুতি কাজীম আল কোরেশী বলেন, সবকিছু দখল হয়ে গেছে। বংশধর হিসেবে আমাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু যাতে দেওয়া হয়। যা কিছু করা হোক, আমাদের যেন সঙ্গে রাখা হয়।

Read Entire Article