‘মা হইয়া নিজের পুলারে চিনতে কষ্ট অয়’

1 month ago 18

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গুলিতে আহন হন শেরপুরের খোকন চন্দ্র বর্মন। তিনি নালিতাবাড়ী উপজেলার কিনা চন্দ্র বর্মনের ছেলে। 

জানা গেছে, ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আহত হন তিনি। পুলিশের ছররা গুলি খোকনের মুখ ও চোখের নিচের অংশে লাগে। এতে তার এক চোখ নষ্ট হয়ে যায়। আর মুখের এমন অবস্থা হয়েছে যে কেউ চিনতেই পারে না এটা খোকন। তার চোখের নিচের হাড় ভেঙে যায়। আর যে চোখটা ভালো আছে সেটাও এখন উন্নত চিকিৎসার অভাবে নষ্ট হওয়ার পথে। হাসপাতালের বিছানা তার একমাত্র ঠিকানা। 

খোকনের মা রিনা রানী দাস বলেন, ‘পুলাডার এমন দশা হইছে, এহন মা হইয়া নিজের পুলারে চিনতে কষ্ট অয়। পুলাডা নিজের শরীরের অনেক যত্ন করত। পুলাডা আমার অহন কান্দে আর কান্দে, আর কয়; তোমরা সরকারকে কও তাড়াতাড়ি যেন আমারে ভালা কইরা দেয়। আন্দোলনের পর সরকার কইছিল যাদের ভালা চিকিৎসা প্রয়োজন তাগোর চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। কিন্তু এহনো কোনো ব্যবস্থা হয় নাই। আমরা অহন কী করমু বুঝবার পারতাছি না।’

পরিবারের সদস্যরা জানান, খোকন ও তার ভাই খোকা পরিবারের আয়ের উৎস ছিল। খোকন আহত হওয়ার পর থেকে তার বড় ভাই খোকা ছোট ভাইয়ের দেখাশোনা করার জন্য চাকরিটা ছেড়ে দেয়। দুই ভাই এক কোম্পানিতে গাড়িচালক ছিল। আহত হবার আগেও আন্দোলনে বেশ কয়েক দিন গিয়েছিল সে। ছাত্র আন্দোলন জোরদার হলে বন্ধ হয়ে যায় তার অফিস। ফলে বন্ধু ও সহকর্মীদের নিয়ে অংশগ্রহণ করে আন্দোলনে। বর্তমানে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে (শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট) চিকিৎসা নিচ্ছে খোকন।

মুঠোফোনে খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, পুলিশ আমাকে খুব কাছ থেকে গুলি করেছে। গুলিতে আমি মাটিতে পড়ে যাই, তবে জ্ঞান হারাইনি। গুলি লাগার পর ছাত্ররা আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফোনে আমার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। আমি জানতাম আন্দোলনে গেলে মরতেও হতে পারে। তবুও ভয় পাইনি। কপাল খারাপ গুলি খেয়ে গেলাম। আমার মুখের অবস্থা একদম ভালো না। অনেক যন্ত্রণা হয়। শুনছি উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে বিদেশ পাঠাবে‌। কিন্তু তিন মাস হয়ে গেল কিছু তো হচ্ছে না। শুধু সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া, আমার চিকিৎসার ব্যবস্থাটা যেন করে দেয়।

খোকনের বড় ভাই খোকা চন্দ্র বর্মন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস ভাই (সারজিস আলম) এসেছিলেন। তিনি কিছু সহযোগিতা দিয়ে গেছেন। আর কিছু ধারদেনা করে সংসার চলছে। আমার চাকরি ছিল সেটাও চলে গেছে। আমার ভাই এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছে। খোকনের একটি চোখ পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে গেছে, অলরেডি আরেকটি চোখ ফুলে আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা না করা হলে ওইটার অবস্থাও খারাপ হবে। গুলি চোখ-মুখ-নাক সব জায়গায় লেগেছে। খোকনকে এখন সহজে চেনাই যায় না।

Read Entire Article