মাগুরার সেই শিশুটি নিয়ে সবশেষ যা জানা যাচ্ছে

4 hours ago 8

মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশুটি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পিআইসিইউতে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি। তার অবস্থা অস্থিতিশীল ও সংকটাপন্ন। তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার শিশুটির দুলাভাই ও দুলাভাইয়ের বাবাসহ চারজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে শিশুটির ছবি, ভিডিও ও পরিচয় শনাক্তকরণের সব বিষয়াদি দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট; একই সঙ্গে বিবাদীদের প্রতি দুটি রুল জারি করেছেন। নির্যাতিত শিশু ও তার পরিবারকে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

রোববার (০৯ মার্চ) রাত ১২টার দিকে মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মতিনের আদালতে শুনানি শুরু হয়। পুলিশ আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত এক নম্বর আসামি হিটু শেখকে সাত দিন এবং সজীব হোসেন, রাতুল শেখ ও জাবেদা বেগমের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকতা মাগুরা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে দিনভর আদালতের মূল ফটকে ছাত্র-জনতা অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে বিক্ষোভ করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানায়।

শিশুটির চিকিৎসায় সিএমএইচের প্রধান সার্জনের নেতৃত্বে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন শল্য বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ, অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ, শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু সার্জন, ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ এবং থোরাসিক সার্জন রয়েছেন। বোর্ডের একজন চিকিৎসক গণমাধ্যমকে জানান, শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। গলায় বড় ক্ষত। ওড়নাজাতীয় কিছু দিয়ে শিশুকে ফাঁস দেওয়া হয়েছিল এবং বুকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হয়েছিল। মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেছে। বুকের ওপর চাপ দেওয়ায় ফুসফুসের যেসব জায়গায় বাতাস থাকার কথা না, সেসব জায়গায় বাতাস ঢুকে গেছে। রোববার (০৯ মার্চ) সকালে বুকে অস্ত্রোপচার করে অতিরিক্ত বাতাস বের করার জন্য টিউব বসানো হয়েছে। অক্সিজেন স্বল্পতায় মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে খিঁচুনি হয়েছে।

তিনি বলেন, শিশুটি এখনো অচেতন। মস্তিষ্কের ক্ষতি কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এখন খিঁচুনি নেই। তবে রক্তে সংক্রমণ অনেক বেশি। শিশুটির রক্তচাপ ধরে রাখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে শিশুটির অবস্থা অস্থিতিশীল ও সংকটাপন্ন।

আমাদের বলার ভাষা নেই—হাইকোর্ট: মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির ছবি, ভিডিও ও পরিচয় শনাক্তকরণ সব বিষয়াদি দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ পুলিশ, সাইবার ক্রাইম ইউনিট এবং বিটিআরসিকে বাস্তবায়ন করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া প্রিন্ট মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা ভিকটিমের ছবি, নাম প্রকাশ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিন কার্যদিবসের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন ও হামিদুল মেসবাহ তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে রিট করলে গতকাল রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব নির্দেশ দেন।

এ সময় আদালত বলেন, যারা ভিকটিমের নাম ও ছবি প্রকাশ করেছে, তাদের আইডেন্টিফাই করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে ধর্ষণের শিকার কোনো ভিকটিমের নাম, ছবিসহ পরিচয় প্রকাশ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। নিজের জনপ্রিয়তার জন্য অনেকেই ভিকটিমের ছবি ও নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিচ্ছেন। এই বাজে জনপ্রিয়তার জন্য আইন ভঙ্গ করতে দেওয়া যাবে না। কেউ নিজের স্বার্থের জন্য ছবি প্রকাশ করলে সেটা সহ্য করা হবে না।

এ সময় আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা লিখিত বক্তব্য আবেদন আকারে এনেছেন, এতে ভালো হয়েছে। নয়তো আমাদের স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দিতে হতো। মূলত আমাদের (আদালতের) কাজ হলো বার্তা দেওয়া। মানুষকে জানাতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা অনুসারে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর নাম-পরিচয় ও ছবি প্রকাশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারাটির প্রচারে কাজ করতে হবে।

আদেশ শেষে আদালত মন্তব্য করেন, এতবড় অবিচার-অন্যায়ের বিষয়ে আমাদের বলার কোনো ভাষা নেই। এ ঘটনা হয়তো আমরা থামাতে পারিনি। তবে ঘটনার পরের ঘটনা থামাতে কাজ করতে পারছি। সবাই মিলে কিছু একটা করার চেষ্টা করেছি।

এদিকে শিশুটি ও তার বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাগুরা জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশুটি ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে এবং সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে ছয় মাসের মধ্যে বিচার শেষ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব আদেশ প্রতিপালনের বিষয়ে আগামী ১৭ মার্চ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়ে ওইদিন এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

পাশাপাশি আদালত বিবাদীদের প্রতি দুটি রুল ইস্যু করেন। রুলে ভিকটিম শিশুটির নাম-পরিচয় ও ছবি প্রকাশ বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ভিকটিমের নাম-পরিচয় ও ছবি সরিয়ে ফেলতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, মাগুরার এসপি, ডিসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

আইনি সহায়তা দেবে বিএনপি: মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশু এবং তার পরিবারকে সব ধরনের আইনি সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ লক্ষ্যে আইনি সেল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। রোববার সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আইনি সহায়তার জন্য মাগুরা কোর্টের ৫ আইনজীবীকে নিয়ে সেল গঠন করা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুর চিকিৎসার সব ব্যয় বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।

৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের বিচার: আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের মামলার বিচার সম্পন্ন করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে উল্লেখ তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এটি করতে হবে। বিচার ৯০ দিনের মধ্যে শেষ না হওয়ার অজুহাতে কাউকে জামিন দেওয়া যাবে না। বর্তমান আইনে রয়েছে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার না হলে জামিন দেওয়া যেত। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে কোনো জামিন দেওয়া যাবে না। মাগুরায় শিশুটির সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এ ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।

‘বাংলাদেশে ধর্ষকদের কোনো স্থান হবে না’: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে ধর্ষকদের কোনো স্থান হবে না। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। রোববার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, মাগুরার ঘটনায় অভিযুক্ত সবাইকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। একইভাবে যদি দেশের কোথাও নারীর প্রতি সহিংসতা বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে নির্দেশ দিয়েছি। এ পর্যন্ত নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছি। নারীরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন। এতে যারা বাধা দিতে আসবে, সহিংসতা করতে আসবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

ধর্ষকদের সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বান জামায়াতের: নারী ও শিশু ধর্ষণকারীদের ঘৃণা জানানো এবং সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে মন্তব্য করে দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, বাস, ট্রেন, লঞ্চ, অফিস, বাসাবাড়ি, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা কোথাও আজ নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নেই। সারা দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তার খণ্ডিতাংশই সংবাদপত্র ও মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। বাস্তব অবস্থা আরও ভয়াবহ। নারী ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা একটি মারাত্মক জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে ইমাম, খতিব ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বসহ সমাজের সচেতন নাগরিকদের ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ধর্ষকদের ঘৃণা ও সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।

তিনি বলেন, মাগুরার আট বছরের মেয়ে শিশুর ধর্ষক ও ধর্ষণের সহযোগিতাকারীদের অপরাধ এক ও অভিন্ন। এদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ রকম ধর্ষক নামের নিকৃষ্টদের পাকড়াও করে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই সমাজে নারী ও শিশু ধর্ষণ, হত্যা, ছিনতাই, গুম, অ্যাসিড সন্ত্রাস ইত্যাদি বেড়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এ অবস্থার জন্য দায়ী নীতিহীন শিক্ষা ও সহশিক্ষা ব্যবস্থা, মাদকাসক্তি, সিনেমা এবং নাটকে অশালীন দৃশ্য প্রচার। এ অবস্থা থেকে একমাত্র কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাই মানুষকে মুক্তি দিতে পারে।

তিনি মাগুরায় শিশু ধর্ষকদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা পূর্বক দেশে নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণ এবং হত্যা বন্ধের ব্যাপারে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর আহ্বান জানান।

ধর্ষকের প্রকাশ্যে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি হেফাজতে ইসলামের: মাগুরায় ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনা জাহেলি যুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান গতকাল রোববার সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ধর্ষকদের প্রকাশ্য শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামে ধর্ষণকারীকে জনসম্মুখে শাস্তি দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। প্রকাশ্য শাস্তি দেখলে মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকবে এবং এ ধরনের কাজ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে সচেষ্ট থাকবে।

হেফাজতের শীর্ষ নেতৃদ্বয় বলেন, বন্দি স্বামীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পবিত্র শবেকদরের দিনে রোজা ভাঙিয়ে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনেরও প্রকাশ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শেষবার ধর্ষণের পর সেই নারী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মারা যান। ফ্যাসিস্ট আমল থেকে দীর্ঘ বিচারহীনতার কারণেই এখনো ধর্ষণের ঘটনা চলমান। ধর্ষণ রোধে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ধর্ষকদের দ্রুত প্রকাশ্য বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।

তারা আরও বলেন, নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে বিচারহীনতাই মূলত দায়ী। বিচারহীনতার সংস্কৃতি কেবল একটি জাহেলি সমাজেরই উদাহরণ হতে পারে, কোনো সভ্য সমাজের নয়। ইসলামের ন্যায্যতার ধারণা, আইন ও বিচারব্যবস্থার আলোকে আমাদের রাষ্ট্রীয় আইন ও বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজালে আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তির পাশাপাশি নারী ও শিশুদেরও পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারব ইনশাআল্লাহ।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) বোনের শ্বশুরবাড়ি মাগুরা শহরের নান্দুয়ালী এলাকায় বেড়াতে গিয়ে বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৫০)-এর লালসার শিকার হয় শিশুটি। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার (০৭ মার্চ) রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তারপর তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়।

Read Entire Article