মানবজাতিকে বিলুপ্ত করতে কতগুলো পরমাণু বোমা লাগবে?

2 hours ago 3

বিশ্ব জুড়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর বিশ্বের পরাশক্তিগুলো এখন নতুন এক সর্বনাশের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার, আধুনিকীকরণ এবং নীতি-প্রণয়নকে কেন্দ্র করে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো যেন এক ধরনের পারমাণবিক শীতল যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের যে কোনো বড় যুদ্ধ পরমাণু অস্ত্রের লড়াই হয়ে উঠবে।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ১৯৪৫ সালে প্রলয়ঙ্করী পরমাণু বোমার ধ্বংসযজ্ঞ এখনো বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচিত হয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বিস্ফোরণে সম্পূর্ণ নগরীগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, যেখানে প্রাণ হারান কয়েক লাখ মানুষ। তবে বর্তমানের পারমাণবিক অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা সেই সময়ের তুলনায় কয়েকশ গুণ বেশি, যা পুরো মানবসভ্যতাকেই এক মুহূর্তে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো এমন বোমা তৈরি করেছে, যা লিটল বয়-এর ধ্বংসযজ্ঞকেও তুচ্ছ করে দেবে। এই ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিভিন্ন দেশে মানুষ ব্যক্তিগত পারমাণবিক আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করছে। শীর্ষ রাজনীতিক থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এখন এক ধরনের উদ্বেগের মধ্যে—তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি মানবসভ্যতার শেষ পরিণতি হতে চলেছে?

বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যার নিয়ন্ত্রণ কেবল ৯টি দেশের হাতে। যদিও সামরিকভাবে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র দুবার, তবে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এসব বিস্ফোরণ শুধু শক্তি যাচাই নয়, বরং রাজনৈতিক ও কৌশলগত শক্তির প্রদর্শন হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বে মানুষের বসতির মাত্র ১২.৫ শতাংশ অঞ্চল, যা প্রায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার। এই অঞ্চলে বসবাসরত কোটি কোটি মানুষ একটি পরমাণু সংঘাতের প্রভাবে মুহূর্তের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, হিরোশিমার ‘লিটল বয়’ বোমার তুলনায় বর্তমানে থাকা অত্যাধুনিক বোমাগুলোর ধ্বংসক্ষমতা অনেক গুণ বেশি।

ধ্বংসের তুলনা : বিভিন্ন ধরনের পরমাণু বোমা

বি-৮৩ বোমা : হিরোশিমার লিটল বয়ের ২০০ গুণ শক্তিশালী। মানবজাতিকে মুহূর্তের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করতে ১২ লাখ ৪১ হাজার ১৬৬টি বি-৮৩ প্রয়োজন।

লিটল বয় : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে ব্যবহৃত বোমা, যা দিয়ে পুরো পৃথিবী ধ্বংস করতে প্রয়োজন ৩৫ লাখ বোমা।

আইভি কিং : যুক্তরাষ্ট্রের আরও শক্তিশালী বোমা, যার একটি বোমা দিয়ে গোটা উত্তর আমেরিকাকে ধূলিসাৎ করা সম্ভব। পৃথিবী ধ্বংস করতে এই বোমার প্রয়োজন মাত্র ৫৫ হাজার।

জার বম্বা : রাশিয়ার তৈরি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বোমা, যা দিয়ে মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে যথেষ্ট ১৬ হাজার বোমা।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাস্তবে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার কারণে এই হিসাবের চেয়ে অনেক কম বোমা দিয়েও মানবজাতি বিনাশের পথে ধাবিত হতে পারে। কারণ পরমাণু অস্ত্রের প্রভাব শুধুমাত্র বিস্ফোরণ এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে না; বিস্ফোরণের পর তেজস্ক্রিয় রেডিয়েশন, অগ্নুৎপাত এবং পরিবেশগত ধ্বংস দূরদৃষ্টি দিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এমন পরিস্থিতিতে পুরো মানবসভ্যতার ধ্বংস প্রায় নিশ্চিত।

বর্তমানে পৃথিবীতে যে পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ রয়েছে, তার গড় কার্যকরী শক্তি প্রায় ৩৩,৫০০ কিলোটন, যা একসাথে প্রয়োগ করলে পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। মানুষ ইতোমধ্যেই এমন শক্তি সৃষ্টি করেছে, যা এক আঘাতেই সমগ্র গ্রহটিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারে। 

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এটি আর কোনো কাল্পনিক গল্প নয়—মানবজাতি নিজেই এমন প্রলয়ঙ্করী শক্তি তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন এমন সময় এসেছে যখন সচেতন ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ ছাড়া, পরমাণু অস্ত্রের এই ভয়ঙ্কর ক্ষমতা পুরো মানব সভ্যতাকে শেষ করে দিতে পারে।
 

Read Entire Article