মানবজাতির প্রকৃত নৈতিকতার পূর্ণতা স্রষ্টার বিধানেই সম্ভব : মাহমুদ হাসান
প্রফেসর চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেছেন, মানবজাতি যত উন্নত হোক না কেন, তাদের পক্ষে চূড়ান্ত নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সত্যিকার নৈতিকতার শিক্ষা ও পূর্ণতা লাভ করতে হলে মানবজাতিকে স্রষ্টার অহির জ্ঞান এবং বিধানের ওপর নির্ভর করতে হবে। একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত বিধানেই রয়েছে মানবিক মূল্যবোধের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা এবং সঠিক ন্যায়বিচার।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য ও সাথীদের পাঠ মূল্যায়ন পরীক্ষা ’২৪-এর জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, পৃথিবীর সুপার পাওয়ার বা উন্নত রাষ্ট্রগুলো প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সামরিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি করলেও নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে তারা চরমভাবে ব্যর্থ।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, মানুষ যত উন্নত হয়েছে এবং রাষ্ট্র যত শক্তিশালী হয়েছে, নৈতিকতার সেই উচ্চতায় তারা কখনোই পৌঁছতে পারেনি। যদি তারা সত্যিকার নৈতিক মূল্যবোধে উন্নতি করত, তাহলে সিরিয়ার মতো দেশে এক কোটিরও বেশি মানুষকে শরণার্থী হতে হতো না। এই মানবিক সংকটের জন্য পৃথিবীর সুপার পাওয়ার রাষ্ট্রগুলো দায়ী। ক্ষমতার রাজনীতি করতে গিয়ে তারা লাখ লাখ মানুষকে তাদের মাতৃভূমি থেকে উৎখাত করেছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের নিজ দেশের একটি কুকুরের জন্য যতটা মূল্য দেয়, অন্য দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সেই মূল্য প্রদর্শন করতে ব্যর্থ। যদি তা পারত, তাহলে গাজায় এতো সংখ্যক নারী, শিশু এবং সাধারণ মানুষকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হতো না। এইসব নির্মমতা প্রমাণ করে যে, উন্নত রাষ্ট্রগুলো মানবিক মূল্যবোধের বিকাশে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ।
সুতরাং পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে সৎ গুণাবলি ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে হবে। এসব মূল্যবোধের নির্ভুল উৎস একমাত্র স্রষ্টার অহির জ্ঞান, যা মানবতার প্রকৃত কল্যাণ ও শান্তি নিশ্চিত করতে পারে।
ড. আজম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, যদি একটি দেশ ও জাতিকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিতে হয়, তাহলে জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশকে আলোকিত করতে হলে আমাদের একদল আলোকিত মানুষ প্রয়োজন। আলোকিত মানুষ হতে হলে আমাদের জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হতে হবে। আর জ্ঞান চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে রাষ্ট্রকে। এখন কোনো পেশি শক্তি দিয়ে নয়, আমাদের জ্ঞানের ভিত্তিতে নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জ্ঞান মানবজাতির অমূল্য সম্পদ, যা ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রের উন্নতির মূলভিত্তি। জ্ঞানের আলোই মানুষকে অন্ধকার থেকে মুক্তি দেয় এবং জীবনের সঠিক পথ দেখায়। এটি এমন এক শক্তি, যা পেশি বা অস্ত্রের শক্তিকে ছাড়িয়ে যায়। প্রকৃত পরিবর্তন ও উন্নয়ন কেবল জ্ঞান অর্জন এবং তার যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সম্ভব।
একটি দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন জ্ঞানসমৃদ্ধ নেতৃত্ব এবং জ্ঞানচর্চার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো এমন একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে সবার জন্য জ্ঞান অর্জনের সমান সুযোগ থাকে।
আলোকিত মানুষ গড়ার জন্য জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হতে হবে। এটি ব্যক্তি এবং জাতিকে উন্নতির পথে পরিচালিত করবে। পেশিশক্তি বা ক্ষমতার মাধ্যমে সাময়িক সাফল্য আসতে পারে, কিন্তু টেকসই উন্নয়ন এবং ন্যায়ভিত্তিক নেতৃত্বের জন্য জ্ঞানের বিকল্প নেই।
তাই, প্রতিটি মানুষের উচিত জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ করা এবং সমাজের অগ্রগতির জন্য তা কাজে লাগানো। আলোকিত সমাজ গড়ার একমাত্র উপায় হলো জ্ঞানচর্চা, কারণ জ্ঞানই সত্যিকারের মুক্তি ও উন্নতির চাবিকাঠি।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাংলাদেশের জন্য এই জন্য রহমত কারণ, তারা প্রতিটি পর্যায়ে নূর বা জ্ঞানের চর্চা করে থাকে। আমি বিশ্বাস করি ছাত্রশিবির এই ধারা ভবিষ্যতে আরও বেগবান করবে, ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, কোরআন থেকে জ্ঞানার্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আল্লাহর পবিত্র নির্দেশনা, যা আমাদের জীবনের সঠিক পথ প্রদর্শন করে। কোরআন আমাদের নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ এবং সঠিক জীবনবোধ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেয়। মানব সমাজের শান্তি ও উন্নতির জন্য কোরআনের শিক্ষার প্রতি আমাদের অবিচলিত দৃষ্টি রাখা জরুরি। আল্লাহর দেওয়া এই জ্ঞানই আমাদের জীবনের কঠিন মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ন্যায় ও সঠিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার পথে পরিচালিত করে। কোরআন ছাড়া পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি সকাল ১০টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ডিন প্রফেসর চৌধুরী মাহমুদ হাসান এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আজম ওবায়েদুল্লাহ। এছাড়াও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ২০২৪ সেশনের সদস্য ও সাথীদের পাঠ মূল্যায়ন পরীক্ষায় দেশ সেরা ১০ জন করে মোট ২০ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।