মানবতাবিরোধী অপরাধ: ট্রাইব্যুনালে হাজির ২৯ আসামি

2 days ago 4

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে দায়ের করা পৃথক ৯টি মামলায় গ্রেফতার হওয়া পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাসহ ২৯ আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার এবং কাশেমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের ২৯ জনকে প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এর মধ্যে চাঁনখারপুলে ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় চার পুলিশের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে এই দিন ঠিক ধার্য রয়েছে। এই মামলায় আট আসামির মধ্যে গ্রেফতার ৪ জনকে আনা হয়েছে আদালতে।

এছাড়াও ৫ আগস্ট আন্দোলনে আশুলিয়ায় ৬ জনের লাশ পোড়ানো ও ৪ আগস্ট একজনকে হত্যাসহ মোট ৭ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হচ্ছে আজ। এর মধ্যে এ মামলার মোট ১৬ জনের মধ্যে আট আসামিকে হাজির করা হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য মামলায় বাকি ১৭ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।

রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে সাক্ষ্যগ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে, ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনসহ সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন বিচারকার্যের শুরুতেই আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে করা আইনজীবীদের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। পরে উপস্থিত আট আসামিকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়।

ওই সময় উপস্থিত আট আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেছেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া রাজসাক্ষী হতে চাওয়া নিয়ে লিখিত আবেদন করতে বলা হয়। লিখিত আবেদনের পর অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হন তিনি।

ট্রাইব্যুনালে ওই দিন প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন- চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান, প্রসিকিউটর তারেক আবদুল্লাহসহ অন্যরা। এছাড়া স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৩ আগস্ট স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষ হয়। ওই দিন মামলার আট আসামিকে হাজির করে পুলিশ। একইসঙ্গে পলাতক সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজনকেও হাজিরের কথা ছিল। তবে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে সরকারি খরচে দুজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:

এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ পলাতক আট আসামিকে গ্রেফতারসহ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৬ জুলাই এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২।

গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।

এফএইচ/এনএইচআর/এমএস

Read Entire Article