মাদারীপুরে মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য কামাল মাতুব্বরকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটেছে।
কামাল মাতুব্বর মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের কাদের মাতুব্বরের ছেলে। তার বিরুদ্ধে অর্ধশত অভিযোগ আছে।
একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার উত্তর খিলগ্রামের বাসিন্দা রাজিব মাতুব্বর, নিজাম সরদার, তাইফুল, তারেক মাতুব্বরসহ একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা করে নেন তিনি। চুক্তি মোতাবেক টাকা দিলেও গত মার্চে ইতালির পরিবর্তে সবাইকে নেওয়া হয় লিবিয়ায়। সেখানে ওই যুবকদের বিক্রি করে দেওয়া হয়। নির্যাতন করে প্রত্যেকের পরিবার থেকে আদায় করা হয় মুক্তিপণের লাখ লাখ টাকা। কয়েক দফা টাকা দিয়ে কারো কারো মুক্তি হলেও অনেকের খোঁজও পাচ্ছে না পরিবার। এ ঘটনার অভিযুক্ত কামালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য ডাসারের পূর্ব কমলাপুর গ্রামের কামাল মাতুব্বর প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। একদিকে ধারদেনা করে টাকা দিয়ে দিশেহারা পরিবার। অন্যদিকে আদরের সন্তানদের খোঁজ না পাওয়ায় পাগল প্রায় স্বজনরা। পরে বাধ্য হয়ে ডাসার থানা ও আদালতে একাধিক মামলা করেন ভুক্তভোগীর পরিবার। একটি মামলায় হাজিরা দিতে বৃহস্পতিবার লোকজন নিয়ে আদালতে আসেন প্রধান অভিযুক্ত কামাল। এসময় ভুক্তভোগীরা গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয়।
ভুক্তভোগী রাজিব মাতুব্বর বলেন, পূর্ব কমলাপুরের কামাল মাতুব্বর আমাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছে ইতালি নেওয়ার কথা বলেন। কামালের দুই ছেলে ইতালি থাকেন। এজন্য প্রলোভনে পড়ে যাই। কিন্তু ইতালির পরিবর্তে লিবিয়া নিয়ে বন্দিশালায় আটকে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয় কামাল।
আরেক ভুক্তভোগী তাইফুল মাতুব্বরের মা অফিয়া বেগম বলেন, ছেলেকে প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়া নেয়। পরে সেখানে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেন কামাল। প্রথমে ইতালি পাঠানোর জন্য কামাল দালালকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরে মাফিয়াদের আরও ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও আমার ছেলের কোনো সন্ধান পাচ্ছি না।
তারেক মাতুব্বর নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, মার্চের ২৪ তারিখ কামাল মাতুব্বর আমাদের প্রথমে দুবাই নেয়। পরে সেখান থেকে লিবিয়া নিয়ে একটি রুমে আটকে রাখে। পাঁচ মাস বন্দি করে রাখে ছোট্ট একটি রুমে। ঠিকমতো খাবারও দেয়নি।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কামাল মাতুব্বরের বিরুদ্ধে ডাসার থানায় মামলা হয়েছে। সে মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে আছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছেন।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/আরএইচ/জেআইএম