মানসিক অস্থিরতা দূর করার ৫ আমল

20 hours ago 3

জীবন মানেই ওঠা-নামা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, শান্তি-অশান্তির মিশেল। কখনো আনন্দে ভরে যায় হৃদয়, আবার কখনো হঠাৎই নেমে আসে দুশ্চিন্তা, দুঃখ কিংবা একধরনের মানসিক অস্থিরতা। এই অস্থিরতা মানুষকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়, ইবাদতে মনোযোগ কমিয়ে দেয় এবং জীবনকে বিষণ্ন করে তোলে। অথচ ইসলাম আমাদের দিয়েছে এমন কিছু সহজ আমল, যা করলে মন শান্ত হয়, হৃদয় প্রশান্ত হয় এবং জীবনের ঝড়-ঝাপটাও সহজ মনে হয়।

আল্লাহতায়ালার নৈকট্যই হলো প্রকৃত প্রশান্তির উৎস। বান্দা যদি প্রতিটি অবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে পারে, তবে অস্থিরতার জায়গা শান্তিতে রূপ নেয়। কোরআন ও হাদিসে মানসিক অস্থিরতা দূর করার কিছু দোয়া, উপদেশ ও অনুশীলন তুলে ধরা হয়েছে। চলুন, জেনে নিই মানসিক অস্থিরতা দূর করার ৫টি আমল—


১. দোয়া

দোয়া হলো মুমিনের হাতিয়ার। দোয়ার মাধ্যমে দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দূর হয়ে যায়। আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, আমি তো (তাদের) কাছেই আছি। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই। (সুরা বাকারা : ১৮৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য এই দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি, ওয়াল আজাজি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালায়িদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজালি।’ (বোখারি : ২৮২৯)

অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের নিপীড়ন থেকে। 


২. ইখলাস

মানসিক শান্তির অন্যতম রহস্য হলো ইখলাস বা একনিষ্ঠতা। মানুষ যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে এবং বিনিময়ে কারও প্রশংসা আশা করে না, তখন তার অস্থিরতা কমে যায়। কারণ সে জানে, প্রতিদান দেবে একমাত্র আল্লাহই। 

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তাদের কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হলো সঠিক দ্বীন। (সুরা বাইয়্যেনাহ : ৫)

৩. আল্লাহর নিয়ামত নিয়ে চিন্তা করা

মানুষ প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর অগণিত নিয়ামতে সিক্ত। কিন্তু আমরা সমস্যার দিকে তাকিয়ে নিয়ামত ভুলে যাই। অথচ নিয়ামত বেশি মনে করলে অস্থিরতা দূর হয়ে যায়।

আল্লাহ বলেন, তিনি তোমাদের সবকিছুই দিয়েছেন, যা তোমরা চেয়েছো। আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গুনে শেষ করতে পারবে না। (সুরা ইবরাহিম : ৩৪)

৪. আল্লাহর ওপর ভরসা করা

যার অন্তর আল্লাহর ওপর ভরসায় পূর্ণ, সে কখনো অস্থির হয় না। হজরত ইবরাহিম (আ.) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট, তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।’মহান আল্লাহ তাঁর জন্য উত্তপ্ত আগুনকে শীতল করে দিয়েছিলেন, এমনিভাবে সাহাবায়ে কেরামকে যখন আবু সুফিয়ানের বাহিনীর ভয় দেখানো হলো, তখন তাঁরাও এই বাক্যে আল্লাহর ওপর আস্থার সাক্ষী দেন, মহান আল্লাহ তাদেরও সাহায্য করেছিলেন। 

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যাদের মানুষ বলেছিল যে নিশ্চয়ই লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। সুতরাং তাদের ভয় করো। ’ কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক! অতঃপর তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহসহ ফিরে এলো, কোনো প্রকার অনিষ্ট তাদের স্পর্শ করেনি, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছিল এবং আল্লাহ মহাকল্যাণময়। (সুরা আলে ইমরান : ১৭৩-১৭৪)


৫. ধৈর্য ধরা

ধৈর্যশীল মানুষ অস্থির হয় না। কারণ আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই থাকেন। আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সুরা বাকারা : ১৫৩)

Read Entire Article