মানিকগঞ্জে কৃষিজমির মাটি লুট, তদন্তের আদেশ চেম্বারে বহাল

3 hours ago 2

মানিকগঞ্জে শতভাগ উর্বর কৃষিজমি থেকে নির্বিচারে মাটি কেটে লুটের ঘটনায় ভূমি মন্ত্রালয়ের সচিবকে কমিটি গঠন করে তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে বহাল রয়েছে।

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে মের্সাস প্রিন্স কনস্ট্রাকশনের মালিক বালু মহালের ইজারাদার মোস্তাফিজুর রহমান প্রিন্সের পক্ষে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার জজ আদালত নো অর্ডার দেন।

চেম্বার জজ আদালতে মের্সাস প্রিন্স কনস্ট্রাকশনের মালিক বালু মহালের ইজারাদার মোস্তাফিজুর রহমান প্রিন্সের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মাহবুবুল ইসলাম এবং রিট পিটিশনকারী কৃষকদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব।

আদেশের বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুবু বলেন, আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ আদালত নো অর্ডার আদেশ দেন। যার মধ্যে দিয়ে হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশ বহাল রইলো। যার ফলে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার রাহাতপুর মৌজার কৃষিজমিকে বালু মহালে পরিণত করা আপাতত বন্ধ রইলো এবং ভূমি মন্ত্রালয়ের সচিবকে স্পেশাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করে ওই বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রইলো।

শুনানিতে রিটকারীর আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুবু বলেন, বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৭ এর ক ও ৯ ধারাসহ কৃষি জমি সংরক্ষণসহ সংবিধানকে অপেক্ষা করে মানিকঞ্জ জেলার প্রশাসন শুধু ভেস্টেড কোয়ার্টারদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কৃষিজমিকে বালু মহালে পরিণত করার চেষ্টা করছে।

এ পর্যায়ে চেম্বার জজ বলেন, এটা তো প্রেসক্লাবের বক্তৃতার মতো মনে হচ্ছে, জবাবে সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে রিট পিটিশন আসলে দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্টের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের বিশ্লেষণ করাই রিট পিটিশনের কাজ। এরপর উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে নো অর্ডার দেন চেম্বার জজ আদালত।

গত ৪ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার রাহাতপুরে শতভাগ উর্বর কৃষিজমি থেকে নির্বিচারে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে অবিলম্বে ভূমি মন্ত্রালয়ের সচিবকে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে করা একটি রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ওইদিন রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আশরাফুল ইসলাম।

এর আগে এ সংক্রান্ত বিষয়ে রিট আবেদন দায়ের করা হয়। রিটে ভূমি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিবাদী করা হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়, রাহাতপুর মৌজায় ৪ হাজার একরের বেশি কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে তিন ফসলি জমির মালিকদের থেকে খাজনা-কর নেওয়া বন্ধ করে সেই জমিতে বালুমহাল ঘোষণা করে ইজারা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। ইজারাদার প্রতিনিয়ত বালু-মাটি খনন করে কৃষিজমি নষ্ট করছেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের পক্ষে জেলা প্রশাসকের কাছে বারবার অভিযোগ করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ইজারাদারের লোকজন দেশি-বিদেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাধারণ কৃষকদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এর প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী মো. শফিকুল ইসলামসহ ১৭ কৃষকের পক্ষে এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট আবেদন করা হয়।

রিট শুনানির পর আদালত আগামী ৩ মাসের জন্য কৃষি জমির নির্বিচার ড্রেজিং বন্ধ করা নির্দেশনা দেন। এছাড়া, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে ৪ সপ্তাহের মধ্যে আদালতে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এফএইচ/এসএনআর/এএসএম

Read Entire Article