মানুষ ঘুমের মধ্যে কেন হাসে, কী করণীয়

2 weeks ago 14

রাতের বেলা সবাই ঘুমে বিভোর। হঠাৎ পাশের কেউ হেসে উঠল – চোখ বন্ধ, মুখে হাসি! এমনটা দেখেছেন কখনো? অনেক সময় মজার মনে হলেও, ঘুমের মধ্যে হাসা কিন্তু শুধু মজা নয়, কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণও লুকিয়ে থাকতে পারে এর পেছনে।

ছোট শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করাও মাঝেমধ্যে ঘুমের মধ্যে হাসে। বেশিরভাগ সময় এটা স্বাভাবিক, কিন্তু কখনো কখনো এটা আমাদের শরীর বা মস্তিষ্কের কোনো অসুবিধার সংকেতও হতে পারে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেন এমন হয় এবং কবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ঘুমের মধ্যে হাসার সাধারণ কিছু কারণ

১. স্বপ্ন দেখা

ঘুমের এক পর্যায়ে থাকে REM (র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট) স্টেজ – তখন আমরা সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখি। যদি স্বপ্নে কিছু মজার বা আনন্দদায়ক ঘটে, মস্তিষ্ক সেই আনন্দে হাসির সাড়া পাঠায়, আর আমরা ঘুমিয়েই হেসে উঠি।

২. প্যারাসমনিয়া (ঘুমের সময় অদ্ভুত আচরণ)

এই ঘুমের সমস্যায় ঘুমের মধ্যে কেউ হাঁটে, কথা বলে বা হঠাৎ হেসে ওঠে। REM ঘুমের সময় শরীর ঠিকভাবে প্যারালাইজড না থাকলে এমন আচরণ দেখা দিতে পারে।

৩. স্নায়ুবিক সমস্যাগুলো

পারকিনসনস ডিজিজ, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা ব্রেন টিউমারের মতো জটিল সমস্যার কারণে ঘুমে হাসি আসতে পারে। এই হাসি স্বপ্নের কারণে নয়, বরং মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কাজের ফলাফল।

৪. জেলাস্টিক সিজার (হাসির খিঁচুনি)

এটি একধরনের বিরল ধরনের মৃগী, যেখানে হঠাৎ করেই হাসির খিঁচুনি হয়, এমনকি ঘুমের মধ্যেও। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস বা টেম্পোরাল লোবের সমস্যার কারণে হয়।

৫. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ

যারা অনেক বেশি স্ট্রেসে থাকেন বা যাদের অতীতে মানসিক আঘাতের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের ঘুমে অস্বাভাবিক স্বপ্ন হতে পারে, যার প্রতিক্রিয়ায় হাসি আসতে পারে।

শিশুরা কেন ঘুমিয়ে হাসে?

শিশুরা ঘুমে বেশি সময় REM পর্যায়ে থাকে। তাদের মস্তিষ্ক তখন দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। এই সময় স্বপ্ন দেখা বা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপের কারণেই শিশুরা ঘুমিয়ে হেসে ওঠে।

এটি একেবারেই স্বাভাবিক। তবে যদি হাসির সঙ্গে শ্বাসের অস্বাভাবিকতা বা খিঁচুনি দেখা যায়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন?

যদি নিচের যেকোনো উপসর্গ দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিতঃ

- ঘন ঘন ঘুমিয়ে হাসা

- অনেকক্ষণ ধরে হাসি থামছে না

- ঘুমের মধ্যে মারধরের মতো আচরণ (হাত-পা ছোঁড়া, বিছানায় লাফানো)

- অদ্ভুত শ্বাস-প্রশ্বাস বা খিঁচুনি

করণীয় ও চিকিৎসা

চিকিৎসা নির্ভর করে হাসির পেছনের কারণের ওপর। যেমন- 

- জেলাস্টিক সিজার হলে অ্যান্টি-সিজার ওষুধ দেওয়া হয়

- স্ট্রেস বা মানসিক চাপ থাকলে থেরাপি (CBT বা সাইকোথেরাপি) কাজ করে

জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন, যেমন –

- ঘুমের নিয়ম মেনে চলা

- রাতে ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল না খাওয়া

- স্ট্রেস কমানো

ঘুমিয়ে হেসে ওঠা বেশিরভাগ সময়ই নিরীহ ও স্বাভাবিক একটি ঘটনা। তবে যদি এটা নিয়মিত হতে থাকে বা সঙ্গে অন্য উপসর্গ থাকে, তখন বিষয়টিকে হালকাভাবে না নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। কারণ স্বাস্থ্য সচেতনতা মানেই সুস্থ জীবন।

আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ কি কখনো ঘুমিয়ে হেসে উঠেছেন? অভিজ্ঞতা থাকলে শেয়ার করুন আমাদের সঙ্গে!

সূত্র: হেলথ শট

Read Entire Article