২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এম এ মান্নান। এরপর থেকে তার অফিস সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শান্তিগঞ্জের ডুংরিয়া গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে হাসনাত হোসেন। কিন্তু এই দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে যেন আলাদীনের চেরাগ পেলেন তিনি। নিমিষেই চেরাগের ছত্রছায়ায় থেকে বদলাতে শুরু করে তার ভাগ্য। শূন্য থেকে অফিস সহকারী এই মানুষটি গত ১৭ বছরে হয়ে যান কোটিপতি। সময়ের পরিক্রমায় সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সব মানুষের কাছে তিনি হাবিল নামে পরিচিতি পান।
এখানেই শেষ নয়, নিজ ক্ষমতাবলে আপন ছোট ভাই প্রভাষক নূর হোসেনকে নিজ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী করেন হাসনাত। এরপর থেকে দুই ভাইয়ের রাজত্বে চলতে থাকে সুনামগঞ্জ-৩ আসন। এমনকি ভাইস চেয়ারম্যান পদে নূর হোসেন বিজয়ী হওয়ার পর থেকে কীভাবে রাতারাতি টাকার সাম্রাজ্য তৈরি করা যায় সেদিকেই নজর ছিল। নির্বাচনী এলাকার মানুষ ভাইস চেয়ারম্যানকে কাবিল বলে ডাকতেন। আর এভাবেই মন্ত্রীর ছায়াতলে থেকে শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যান হাবিল-কাবিল।
আরও পড়ুন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরপর চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এম এ মান্নান। এর মধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাবেক এই মন্ত্রীর অফিস সহকারী হাসনাত হোসেন (ওরফে হাবিল) ও তার ছোট ভাই নূর হোসেন (ওরফে কাবিল) এই দুই ভাই মিলে সাবেক এই মন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সিন্ডিকেট বাণিজ্য, উপজেলা প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার, জলমহাল সিন্ডিকেট বাণিজ্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সিন্ডিকেট বাণিজ্য, টিআর কাবিখা বাণিজ্য, খাদ্যগুদামে ধান-চাল বাণিজ্য, ইউপি নির্বাচনে নির্বাচনী বাণিজ্য, ভোটবাণিজ্য, থানাকে প্রভাবিত করে সিন্ডিকেট বাণিজ্য, ভূমি সিন্ডিকেট বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শান্তিগঞ্জের স্থানীয় এক সাংবাদিক জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় সাংবাদিকরা যখন তাদের অনিয়ম তুলে ধরে নিউজ করতে চেয়েছেন তখনই তাদের ওপর হামলা চালানোসহ নানা ধরনের হয়রানি করা হয়েছে। তাই ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেনি।
হাসনাত হোসেন আমার পিএস ছিলেন না। সরকারিভাবে একজন অফিস সহকারী দেওয়া হয়। হাসনাত সেই অফিস সহকারীর দায়িত্বে ছিলেন। আমি বিশাল গাছ নাকি! যে আমার ছায়াতলে থেকে হাসনাত কোটি টাকার দুর্নীতি করবে। তবে হ্যাঁ যদি সে এবং তার ভাই এমনটি করে থাকে তাহলে দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।-এম এ মান্নান
শান্তিগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা ও আরটিভির সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি শহীদ নূর আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, হাসনাত ও নূর হোসেনের যন্ত্রণায় শান্তিগঞ্জসহ পুরো এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তারা দুই ভাই সাবেক এমপির দাপট দেখিয়ে অনেক টাকা লুটপাট ও দুর্নীতি করেছেন। এ নিয়ে নিউজ করতে গিয়ে আমি অনেকবার হয়রানির শিকার হয়েছি।
আরও পড়ুন
- হত্যা মামলায় কারাগারে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ
- সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদের বাসা থেকে যা পেলো পুলিশ
শান্তিগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা আমিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় হাসনাত ও নূর বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। তাদের যন্ত্রণায় এই অঞ্চলের মানুষ কটাক্ষ করে তাদের হাবিল-কাবিল বলে ডাকত।
এসব অভিযোগের বিষয়ে হাসনাত হোসেন ও ছোট ভাই নূর হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
দুই ভাই মিলে সাবেক মন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সিন্ডিকেট বাণিজ্য, উপজেলা প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার, জলমহাল সিন্ডিকেট বাণিজ্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সিন্ডিকেট বাণিজ্য, টিআর কাবিখা বাণিজ্য, খাদ্যগুদামে ধান-চাল বাণিজ্য, ইউপি নির্বাচনে নির্বাচনী বাণিজ্য, ভোটবাণিজ্য, থানা প্রভাবিত করে সিন্ডিকেট বাণিজ্য, ভূমি সিন্ডিকেট বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
তবে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের টানা চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, হাসনাত হোসেন আমার পিএস ছিল না। সরকারিভাবে একজন অফিস সহকারী দেওয়া হয়। হাসনাত সেই অফিস সহকারীর দায়িত্বে ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশাল গাছ নাকি! যে আমার ছায়াতলে থেকে হাসনাত কোটি টাকার দুর্নীতি করবে। তবে হ্যাঁ যদি সে এবং তার ভাই এমনটি করে তাহলে দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।’
এলএএইচ/এসএইচএস/জেআইএম