মামদানির জয়ের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জারা রহিম

2 hours ago 4

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়েছেন ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। কিন্তু তার এই ঐতিহাসিক বিজয়ের নেপথ্যে ছিলেন এক নিপুণ কৌশলবিদ তরুণী—বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক জারা রহিম। নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে মামদানির প্রচারণার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জারা।

রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ডিজিটাল কৌশল নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন ৩৫ বছর বয়সী এই তরুণী। গত ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি মামদানির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং নির্বাচনী প্রচারণার মূল সুর নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের খবর অনুসারে, জারা রহিম মামদানিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘রাজনীতিবিদদের কল্পিত নিউইয়র্ক নয়, আসল নিউইয়র্ককে কেন্দ্র করে প্রচারণা চালাতে।’ তার এই পরামর্শই হয়ে ওঠে ডেমোক্র্যাটদের প্রচারণার মূল মন্ত্র। এর ভিত্তিতেই তারা গড়ে তোলেন এক তৃণমূলভিত্তিক সংগঠন, যেখানে এক লাখের কাছাকাছি স্বেচ্ছাসেবক যুক্ত হয়ে ২ লাখ ৪৭ হাজার ভোটারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন।

বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার অধিকারী জারা রহিম

দক্ষিণ ফ্লোরিডায় বেড়ে ওঠা জারা রহিম যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক। ২০১২ সালে বারাক ওবামার পুনর্নির্বাচনী প্রচারণায় ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরে দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ফ্লোরিডা ডিজিটাল কনটেন্ট ডিরেক্টর হন। সেই সময় জারা শিখেছিলেন কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে রাজনৈতিক সংগঠনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

পরবর্তীতে তিনি হোয়াইট হাউসের ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজি দপ্তরে কাজ করেন, এরপর উবারে যোগ দেন এবং রাইড-শেয়ারিং সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন।

২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করার পর জারা রহিম ফ্যাশন জগতে প্রবেশ করেন। ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনের কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফ্যাশন, রাজনীতি ও বিনোদনজগতের প্রভাবশালীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে মামদানির জনসংযোগ কৌশলে বড় ভূমিকা রাখে।

জারা রহিম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ২৪, মারাইয়া কেরি ও নেটফ্লিক্স-এর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বাধীন যোগাযোগ পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন।

মামদানির জন্য কৌশল: বাস্তব নিউইয়র্কের গল্প

জারা রহিমের কৌশল ছিল স্বচ্ছতা ও সরাসরি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ। প্রচারণায় তিনি জোর দেন সেই সব সম্প্রদায়ের ওপর, যাদের প্রচলিত রাজনীতি উপেক্ষা করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা ও বাস্তব জীবনের উপস্থিতি—দুই দিকেই ছিল তার ভারসাম্যপূর্ণ পরিকল্পনা। টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম ভিডিওর পাশাপাশি তিনি নিশ্চিত করেন, জোহারান মাঠে গিয়ে বিভিন্ন ভাষায়—যেমন স্প্যানিশ, হিন্দি ও বাংলা—শ্রমজীবী ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন।

‘এরা সেই বাংলাদেশি চাচা আর পশ্চিম আফ্রিকার খালা, যারা আগে কোনো মেয়র প্রাইমারিতে ভোটই দেননি,’ বলেন জারা রহিম। ‘তারা দেখেছেন, কেউ তাদের পাড়ায়, তাদের মসজিদে এসে বলছে—তোমরা গুরুত্বপূর্ণ।’ নিউইয়র্কে প্রায় ১০ লাখ মুসলিম নাগরিক বসবাস করেন।

বিতর্কে দৃঢ় অবস্থান ও সংগঠনের সাফল্য

নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো যখন ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য করে সমালোচনায় পড়েন, তখন জারা রহিম দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘কুয়োমো মুসলিমদের কাছে ভোট চাইছেন একজন মুসলিমকে খারাপ বলে—এটি এক মরিয়া চেষ্টা, যার কাছে মুসলিমদের বলার মতো কিছুই নেই।’

জারা রহিম কাজ করেছেন আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ প্রচারণা সদস্যের সঙ্গে—যাদের মধ্যে ছিলেন মায়া হান্দা, তাশা ভ্যান অওকেন এবং ফাইজা আলি। তাশার নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকরা শুধু প্রাইমারিতেই ১৬ লাখ বাড়ির দরজায় কড়া নাড়েন।

গত ৪ নভেম্বরর নির্বাচনে বিজয়ের পর মামদানি এক সর্ব-নারী ট্রানজিশন টিমের ঘোষণা দিয়েছেন, যেখানে জারা রহিমের সঙ্গে রয়েছেন সাবেক ফেডারেল ট্রেড কমিশনের চেয়ারম্যান লিনা খান, সাবেক উপমেয়র মারিয়া টরেস-স্প্রিংগার, ইউনাইটেড ওয়ের সভাপতি গ্রেস বনিলা এবং সাবেক উপমেয়র মেলানি হার্টজগ।

২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জোহারান মামদানি। তখন তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় ও এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী মেয়র। আর এসব রেকর্ডের অন্যতম কারিগর হিসেবে নাম আসবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জারা রহিমের।

সূত্র: ফরচুন
কেএএ/

Read Entire Article