মামলা থেকে নাম বাদ দিতে ৫ লাখ টাকা চাইলেন এসআই

3 months ago 14

নাটোরে মামলা থেকে আমেরিকা প্রবাসী রাসেল হোসাইনের নাম প্রত্যাহারের কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে গুরুদাসপুর থানার এসআই আবু জাফর মৃধার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার।

জানা যায়, গত ১৫ মে গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় বাজার এলাকায় ইটভাটা ব্যবসায়ী ফরিদ মোল্লার ছেলে রুবেল মোল্লাকে দুর্বৃত্তরা মারধর করে। মারধরের সময় আমেরিকা প্রবাসী রাসেল হোসাইনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এরই জেরে পরের দিন ১৬ মে করা মামলায় প্রবাসী রাসেলকে ১ নম্বর আসামি করে মামলা করেন ফরিদ মোল্লা। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান গুরুদাসপুর থানার এসআই আবু জাফর মৃধা। 

আরও জানা গেছে, মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই এসআই আবু জাফর মৃধা প্রবাসী রাসেল হোসাইনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। কথা বলেন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার গোলাম রাব্বির সঙ্গে। একপর্যায় সোমবার (২ জুন) মোবাইল ফোনে ম্যানেজার গোলাম রাব্বির কাছে প্রবাসী রাসেল হোসাইনের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা দাবি করেন এবং ঈদের পূর্বেই এক লাখ টাকা দিতে হবে বলেও জানান। 

আমেরিকা প্রবাসী রাসেলের ম্যানেজার গোলাম রাব্বি বলেন, আমি আমেরিকা প্রবাসী রাসেল ভাইয়ের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করি। কিছুদিন আগে একটি মারামারির মামলায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলায় রাসেল ভাইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে এক নম্বরে। সে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবু জাফর মৃধা প্রতিনিয়ত আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। 

তিনি আরও বলেন, সোমবার রাতে আমার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তিনি রাসেল ভাইয়ের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি করে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। ঈদের আগেই এক লাখ টাকা তাকে দিতে হবে। আমি এসআইয়ের ঘুষ দাবির বিষয়টি রেকর্ড করে প্রতিকার পাওয়ার জন্য নাটোর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

আমেরিকা প্রবাসী রাসেল হোসাইন বলেন, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা থাকি। আমার গুরুদাসপুর পৌরসদরের চাঁচকৈড় বাজারে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটির দেখভাল ও ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছে গোলাম রাব্বি নামের এক ছেলে। 

তিনি আরও বলেন, কিন্তু আজ আমি চরম হতাশা, অপমান আর কষ্ট নিয়ে বলছি, একটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা মারধরের মামলায় আমাকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে, যেখানে আমি দেশে পর্যন্ত নেই। এর চেয়েও ভয়াবহ সত্য হলো- গুরুদাসপুর থানার এসআই আবু জাফর মৃধা আমার ম্যানেজার রাব্বিকে ফোন দিয়ে মামলায় নাম কাটার শর্তে আমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। 

রাসেল হোসাইন বলেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তার মুখে সরাসরি এমন কথা শুনে আমি হতবাক, ব্যথিত এবং আতঙ্কিত। আমি সরকারের কাছে, পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে এবং সাংবাদিক ভাইদের কাছে জোর দাবি জানাই, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। এসআই আবু জাফরের মতো দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।

এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর মৃধা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টাকা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। এসব অভিযোগ সত্য নয়।

গুরুদাসপুর থানার (ওসি) আসমাউল হক বলেন, মারামারির ঘটনায় মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারের কথা বলে ঘুষ চাওয়া হয়েছে এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ নেই।

নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুতই এ বিষয়ে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Read Entire Article