কথায় আছে, সন্তানের জন্য সব পারেন মা। আর সেটিই যেন প্রমাণ করলেন চীনের পূর্বাঞ্চলীয় ঝেজিয়াং প্রদেশের এক মা। ছেলের পক্ষে আইনী লড়াই করার জন্য ৯০ বছর বয়সে আয়ত্ত করেছেন স্থানীয় ফৌজদারি আইন ও কার্যবিধি।
জানা গেছে হে নামে ওই নারীর ছেলে লিন (৫৭) একটি হাই প্রোফাইল মামলার আসামি। লিনের বিরুদ্ধে ১১৭ মিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার) চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। আর সেই মামলাতেই ছেলের পক্ষে আইনজীবী হয়েছেন মা। সন্তানের প্রতি গভীর মমত্ববোধ থেকে আইন শিখে আদালতে দাঁড়িয়েছেন হে।
চীনের হুয়াশাং নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ৩০ জুলাই ঝোউশান মিউনিসিপ্যাল ইন্টারমিডিয়েট কোর্টে মামলাটির শুনানি শুরু হয়। আসামি লিন গত বছরের এপ্রিলে গ্রেফতার হন। অভিযোগ, তিনি স্থানীয় এক উদ্যোক্তা হুয়াংয়ের কাছ থেকে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে চাঁদাবাজির মাধ্যমে মোট ১১৭ মিলিয়ন ইউয়ান আদায় করেন । হুয়াং ২০০৯ সালে চীনের শীর্ষ ১০০ ধনী ব্যক্তির একজন ছিলেন ও সে সময় তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮০০ কোটি ইউয়ান (প্রায় ১১০ কোটি মার্কিন ডলার)।
প্রসিকিউশনের ভাষ্য অনুযায়ী, লিন ও হুয়াং একসঙ্গে গ্যাস উৎপাদন ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। কিন্তু হুয়াং প্রায়ই দেরিতে টাকা দিতেন, ফলে লিনের কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় ও বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়। পরে লিন ও তার হিসাবরক্ষক হুয়াংয়ের কর সংক্রান্ত অনিয়মের তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন ও এভাবে বিপুল অর্থ আদায় করেন।
২০২৩ সালের শুরুতে হুয়াং পুলিশে অভিযোগ দিলে লিন গ্রেফতার হন।
লিনের মা হে জানান, ছেলেকে খুব বেশি মিস করার কারণেই তিনি গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সন্তানের পক্ষে আইনি লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে বয়সের কারণে পরিবার এতে আপত্তি জানালেও তিনি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি। নাতনির ভাষায়, আমার দাদি খুব জেদি। তিনি অন্যের কথা শোনেননি। তিনি নিজে ফৌজদারি আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধি বিষয়ে বই কিনে পড়েছেন।
হে প্রতিদিন আদালতে গিয়ে একই ধরনের মামলার নথি অধ্যয়ন করেন বলেও নাতনি জানান।
শুনানির দিন হাতকড়া পরা ছেলেকে আদালতে আনা হলে তিনি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন ও কান্না থামানোর চেষ্টা করেন। লিন নিজেও একজন পেশাদার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন, যাতে মা ও আইনজীবী একসঙ্গে তার পক্ষে লড়তে পারেন।
তবে শুনানি চলাকালীন কিছুক্ষণ পর হে অসুস্থ বোধ করলে আদালত আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা অ্যাম্বুলেন্সের চিকিৎসকদের ডাকেন। পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি আদালত ছেড়ে যেতে রাজি হননি। এই মামলার শুনানি এখনো ঝোউশান আদালতে চলমান রয়েছে।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
এসএএইচ