মার্কিন প্রেসিডেন্টরা শপথবাক্য কীভাবে পড়েন

3 hours ago 3
ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি একবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন, সোমবার (২০ জানুয়ারি) আবারও শপথ গ্রহণ করবেন। ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে প্রধান বিচারপতির কাছে তিনি শপথ নেবেন এবং তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হবে। শপথ গ্রহণের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে কিছু নির্দিষ্ট বাক্য উচ্চারণ করতে হয়, যেগুলো শপথের মূল অংশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা যে শপথ বাক্যটি পড়েন, তা হলো: “আমি সর্বান্তঃকরণে শপথ করছি (অথবা নিশ্চিত করছি) যে, আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব এবং আমার সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে দেশের সংবিধান সংরক্ষণ করব, একে সুরক্ষা দেব এবং এর প্রতিপালন করব।” এটি হলো প্রেসিডেন্ট শপথের মূল বাক্য, তবে এই রীতি বিভিন্ন সময় ও পরিস্থিতিতে কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় শপথে প্রশ্নবোধক বাক্য ছিল। উদাহরণস্বরূপ, "আপনি জর্জ ওয়াশিংটন, সর্বান্তঃকরণে শপথ নিচ্ছেন.. কি না?" তখন তাকে "হ্যাঁ" বলে উত্তর দিতে হতো। পরবর্তীতে এই রীতি পরিবর্তিত হয়ে এখন প্রেসিডেন্ট শপথ বাক্যটি পড়েন, বাক্য অনুসরণ করে। বাইবেল বা অন্য বইয়ে হাত রাখা  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার সময় একটি প্রথা রয়েছে, যেখানে বাইবেলের ওপর হাত রেখে শপথ নিতে হয়। শপথ বাক্যটি উচ্চারণ করার সময় ডান হাত ওপরে থাকে, বাঁ হাত থাকে বাইবেলের ওপর। এই প্রথা ১৭৮৯ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকেই শুরু। তিনি বাইবেলে হাত রেখে শপথ নিয়েছিলেন এবং তার পরবর্তী প্রেসিডেন্টরাও একই প্রথা অনুসরণ করেছেন। তবে কয়েকজন প্রেসিডেন্ট ব্যতিক্রম ছিলেন। যেমন টমাস জেফারসন, ক্যালভিন কুলিজ, এবং থিওডর রুজভেল্ট বাইবেলে হাত রাখেননি। এ ছাড়া জুন কুইন্সি এডামস বাইবেলের বদলে আইনের একটি বইয়ে হাত রেখে শপথ নিয়েছিলেন, যা তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে তিনি আইনের প্রতি অনুগত থাকবেন। ট্রাম্পের শপথ: দুটি বাইবেলে হাত রাখা  ২০১৭ সালে, প্রথম মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প দুটি বাইবেলে হাত রেখে শপথ নিয়েছিলেন। এর আগেও শপথ নেওয়ার সময় অন্য প্রেসিডেন্টরা এই প্রথা অনুসরণ করেছেন, যেমন হ্যারি ট্রুম্যান, ডোয়াইট আইসেনহাওয়ার, রিচার্ড নিক্সন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা। এ ছাড়া বাইডেন তার শপথের সময় চামড়ায় মোড়ানো একটি বাইবেলে হাত রাখেন, যা ১৮৯৩ সাল থেকে তার পরিবারের সম্পত্তি। শপথ অনুষ্ঠান এবং প্রথা  প্রথা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠান ক্যাপিটল ভবনের পশ্চিম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার শীতকালীন কারণে অনুষ্ঠানটি ক্যাপিটল রাউটেন্ডা হলে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সেনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের একটি যৌথ কমিটি। শপথ অনুষ্ঠানের প্রথা অনুযায়ী, প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট শপথ নেন, তারপর প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করেন। ট্রাম্পের সঙ্গে এবার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জে ডি ভান্স। ভাইস প্রেসিডেন্টের শপথ বাক্য  ভাইস প্রেসিডেন্টদের শপথ বাক্যটি প্রেসিডেন্টের শপথ বাক্যের তুলনায় একটু ভিন্ন। ১৮৮৪ সাল থেকে, ভাইস প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি সেনেটর, প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য এবং অন্যান্য কর্মচারীরাও এই শপথ বাক্যটি পাঠ করেন। ভাইস প্রেসিডেন্টের শপথ বাক্য হলো: “আমি সর্বান্তকরণে শপথ করছি (অথবা নিশ্চিত করছি) যে, আমি সংবিধান মেনে চলব, দেশি-বিদেশি যেকোনো শত্রুর হাত থেকে সংবিধানকে রক্ষা করব। আমি সংবিধানের প্রতি সত্যিকারের বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করব। কারও প্রতি অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী না হয়ে আমি স্বাধীনভাবে এই দায়িত্ব গ্রহণ করছি। যে দায়িত্ব পালনে এবং যে পদে কাজ করতে আমি এগিয়ে যাচ্ছি, তা সুচারুভাবে এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করব। ঈশ্বর আমাকে সহায় হন।” শপথের পরবর্তী কার্যক্রম  শপথ গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট একটি অভিষেক ভাষণ দেন, যেখানে তিনি তার দায়িত্ব পালনের সংকল্প ও পরিকল্পনা জানান। এরপর বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানানো হয়। শপথের পর প্রেসিডেন্ট একটি শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন, যা ক্যাপিটল ভবনের প্রেসিডেন্ট রুমে অনুষ্ঠিত হয়। এর পরপরই আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে একটি মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। ২০ জানুয়ারি : অভিষেক দিবস  প্রথা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠান ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়, যা "অভিষেক দিবস" হিসেবে পরিচিত। এই অনুষ্ঠানটি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়, তবে যদি ২০ জানুয়ারি রবিবার পড়তে থাকে, তবে শপথ অনুষ্ঠান একদিন পেছানো হয়, অর্থাৎ ২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট তার দায়িত্ব শুরু করেন, যা একটি ঐতিহাসিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া।
Read Entire Article