মালয়েশিয়ার সারওয়াকে ২ লাখ কর্মী প্রয়োজন

14 hours ago 7

‘মালয়েশিয়ার দ্বীপরাজ্য সারওয়াকের পাম বাগানে দুই লাখ কর্মী প্রয়োজন। কিছু সমস্যার কারণে এখানে কর্মী অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত করা উচিত।’

ইন্দোনেশিয়া সফর শেষে বুধবার (৮ জানুয়ারি) সারওয়াক রাজ্যের খাদ্য শিল্প, পণ্য ও আঞ্চলিক উন্নয়নমন্ত্রী দাতুক সেরি ডা. স্টিফেন রুন্ডি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, সারওয়াকের ১.৬২ মিলিয়ন হেক্টর পাম বাগানের জন্য দুই লাখেরও বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন। তিনি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করতে ইন্দোনেশিয়ার আন্তর্জাতিক কর্মীবাহিনী পরিচালনার জন্য নিবেদিত একটি সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও দেখা করেন।

jagonews24

৭ জানুয়ারি, রুন্ডি ৬৫ জন ইন্দোনেশিয়ান শ্রমিকের প্রথম ব্যাচকে স্বাগত জানান। যারা শ্রী আমান এবং সারাটোকের সালক্রা বাগানে ফসল কাটার কাজ করবে। আগামী মাসের শুরুতে আরও এক হাজার শ্রমিক আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে মালয়েশিয়ার জাতীয় দৈনিক নিউ স্ট্রিট টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারওয়াক রাজ্যে শ্রম ঘাটতি মেটাতে বিদেশি শ্রমিকদের অনুমোদনের সময় ৯০ দিন থেকে কমিয়ে ৪৫ দিন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

২০১৪ সালে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সারওয়াক প্রদেশে কৃষিখাতে পাঠানোর জন্য পাঁচ হাজার বাংলাদেশিকে চূড়ান্ত করেছিল। কিন্তু তখন দুই সরকারের মধ্যে জি-টু-জি চুক্তিতে মালয়েশিয়া সরকারের আগ্রহের অভাবে শেষ পর্যন্ত তাদেরকে পাঠানো যায়নি।

মালয়েশিয়ার সারওয়াকে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে চলে কূটনৈতিক তৎপরতা। ২০২৩ সালের ১২ জুলাই বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার রাজ্যের প্রিমিয়ার (রাজ্য সরকার প্রধান) দাতুক পাটিঙ্গি তান শ্রী আবাং জোহারি তুন ওপেংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দক্ষ কর্মী নিয়োগে রাজ্য সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে।

jagonews24

সারওয়াক রাজ্যকে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে এবং এক্ষেত্রে হাইকমিশন তথা বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ সহযোগিতার বিষয়ে আশ্বাস দেয়া হয় বলে জানান হাইকমিশনার।

এ সময় বাংলাদেশ থেকে পেশাভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ নিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সারওয়াক রাজ্যের সরকারপ্রধান তার দপ্তরের কর্মকর্তাদের তাৎক্ষিণকভাবে নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশের হাইকমিশনার তখন বলেন, চেষ্টা করলে সারওয়াকে সীমিত সংখ্যক কর্মী পাঠানো সম্ভব। সারওয়াকের একটা স্টিল মিলে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে ২০ জন কর্মী পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল হাইকমিশন। এই স্টিল মিলে মোট ৬৩ জন বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। তারা ভালো আয় করছেন।

এছাড়া সারওয়াকের একটি নামকরা প্ল্যানটেশনে এক হাজার কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড ২০২৩ সালে সত্যায়ন করেছিল হাইকমিশন। তবে ডিমান্ডের বিপরীতে কতজন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা জানতে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দ্বীপরাজ্য সারওয়াকের পাম বাগানে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ চলমান। হাইকমিশন থেকে কয়েকটি কোম্পানির অ্যাপ্রুভাল সত্যায়নও হয়েছে। এ পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বা সারওয়াক প্রদেশে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন- এ বিষয়ে দূতাবাস বা মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, সারওয়াক মালয়েশিয়ার একটি আলাদা স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ। এটি পাহাড়ি এলাকা। ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা সেখানে অধিকার সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে পারেন।

তারা বলছেন, সারওয়াক প্রদেশে বাংলাদেশ মিশনের কোনো কার্যালয় নেই। ফলে সেখানে শ্রমিকরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে দূতাবাসকে জানানো কঠিন হয়। ফলে শ্রমিকদের চাকরি এবং তাদের জন্য সম্পূর্ণ বিমা কভারেজ নিশ্চিত করার পরই কাউকে সারওয়াক প্রদেশে পাঠানো উচিত।

jagonews24

এদিকে গত বছর মালয়েশিয়ায় প্ল্যান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ শুরু হয়। সত্যায়নের মেয়াদ শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৫।

দেশটির সরকার প্ল্যান্টেশন সেক্টরের জন্য নির্বাচিত বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সর্বশেষ সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করে।

গত বছরের ৪ নভেম্বর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রিক্রুটিং এজেন্টরা কর্মীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার অতিরিক্ত অর্থ নেবেন না। সব লেনদেন উপযুক্ত লিখিত দলিল রসিদ বা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সম্পন্ন করবেন এবং অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্ট ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মীদের লেনদেন না করার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

এছাড়া সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্ট নির্ধারিত তারিখের আগে কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভিসা, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বহির্গমন ছাড়পত্র এবং বিমান টিকিট, প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশনসহ সব প্রস্তুতি নিশ্চিত করবেন। রিক্রুটিং এজেন্টরা যথাসময়ে চাকরির শর্ত, বেতন-ভাতা, অন্যান্য সুবিধা, চাকরির পরিবেশসহ সব বিষয়ে কর্মীকে সুস্পষ্টভাবে অবহিত করবেন।

এমআরএম/এএমএ

Read Entire Article