মালয়েশিয়ায় পাসপোর্ট নবায়নে চরম ভোগান্তিতে অর্ধলক্ষাধিক প্রবাসী। এমআরপি ও ই-পাসপোর্ট জটিলতায় এসব প্রবাসীর অনেকেই রয়েছেন বৈধ ভিসা হারানোর শঙ্কায়। পাসপোর্ট নবায়নে এক দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে ছুটতে হচ্ছে তাদের। রাতভর অপেক্ষা ও দিনভর চেষ্টার পরও মিলছে না প্রত্যাশিত পাসপোর্ট সেবা।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারখানেক প্রবাসী ভিড় জমিয়েছেন ই-পাসপোর্ট সেবায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এক্সপাট সার্ভিসেস লিমিটেডে (ইএসকেএল)।
অপেক্ষমাণ বেশিরভাগই প্রবাসীর অভিযোগ, ফোনে মিলছে না ইএসকেএলের অ্যাপয়েন্টমেন্ট; এর জন্য তাদের অনেকেই অপেক্ষা করছেন গভীর রাত থেকে।
এর মধ্যে একজন আব্দুল্লাহ আল মামুন, যিনি ভোর ৪টা থেকে অপেক্ষায় আছেন ভেতরে প্রবেশের। ৭ আগস্ট তিনি এমআরপি পাসপোর্ট করার জন্য কাগজপত্র দিয়েছিলেন পোস্ট অফিসে। তিন মাস শেষেও অনলাইনে তথ্য আপডেট না হওয়ায় হাইকমিশনের পাসপোর্ট শাখায় গিয়েছিলেন খোঁজ নিতে। সেখান তাকে জানানো হয়, এমআরপি নয় তাকে ই-পাসপোর্ট করতে হবে। সেই আবেদন বাতিল করে এখন এসেছেন ই-পাসপোর্ট করার জন্য।
মামুনের ভিসার মেয়াদ শেষ হবে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি)। সময়মতো পাসপোর্ট না পেলে অবৈধ হয়ে যেতে হবে তাকে। তার মতো এমআরপি পাসপোর্ট নবায়ন জটিলতায় রয়েছেন অর্ধলক্ষাধিক প্রবাসী। যারা গত কয়েক মাসে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট নবায়নে আবেদন জমা দিয়েছিলেন হাইকমিশনে।
কুয়ালালামপুরের দামানসারা থেকে আসা মো. আয়নুল বলেন, পাসপোর্ট আমাদের নাগরিক অধিকার সেই অধিকার পেতে যদি এত সংগ্রাম করতে হয় তাহলে আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি (রেমিট্যান্স) যোদ্ধা হলাম কীভাবে? এ সময় প্রবেশমুখে নিরাপত্তাকর্মীর দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে এই পরিস্থিতি উত্তরণে দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট নবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের হস্তক্ষেপ চান সেবা নিতে আসা প্রবাসীরা। বৈসম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু বদলায়নি প্রবাসীদের ভাগ্য, প্রবাসীরা কোনো করুণা নয় বরং তাদের ন্যায্য অধিকারটুকু চায় বলেও মন্তব্য করেন তারা।
মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের পাসপোর্ট পেতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগার অভিযোগ আগে থেকেই। তবে রোববার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা পাসপোর্ট অধিদপ্তর এক প্রজ্ঞাপনে এমআরপি পাসপোর্ট সাময়িক বন্ধের ঘোষণায় এ দুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছায়।
তিন-চার মাস আগেও যারা আবেদন করেছেন সেসব প্রবাসীকেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে এমআরপি বাদ দিয়ে ই-পাসপোর্টের জন্য নতুন করে আবেদন করতে বলা হয়। এমআরপি বাতিল করে ই-পাসপোর্ট করতে আসা এসব প্রবাসীরাই এখন ভিড় জমাচ্ছেন ইএসকেএলে। আর এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন আবেদনকারীরা।
হাইকমিশন সূত্র বলছে, প্রতিমাসে প্রায় ১৫ হাজার নতুন কর্মী পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করে থাকে।
এদিকে ই-পাসপোর্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইএসকেএল কর্তৃপক্ষ বলছে, একসঙ্গে এত মানুষের সমাগম হচ্ছে যা সামাল দেয়া মুশকিল। প্রতিদিন ৭০০-৮০০ মানুষকে সেবা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ইএসকেএলের মার্কেটিং ম্যানেজার আরমান পারভেজ মুরাদ। তিনি বলেন, পাসপোর্টের জন্য এই ভোগান্তির পেছনে হাইকমিশন থেকে গত কয়েক মাসে ৫৪ হাজার এমআরপি পাসপোর্ট গ্রহণ ও সম্প্রতি পূর্বঘোষণা ছাড়াই এমআরপি বন্ধকে দায়ী করেন।