বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক বিশেষ সমাবেশ। অলিম্পিক হোটেলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয় বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক মোর্শেদ। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি আধুনিক নগরায়ণ ও কর্মসংস্থানের কারণে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। এখানে কর্মরত প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি শ্রম ও মেধা দিয়ে শুধু নিজেদের পরিবারকেই সচ্ছল করছেন না বরং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকেও সমৃদ্ধ করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি জানান, গত অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছে প্রায় ৩০.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এক বছরে সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর বড় একটি অংশ এসেছে মালয়েশিয়া থেকে, যা বর্তমানে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহৎ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ।
প্রবাসীদের বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে অর্থ পাঠানোর গুরুত্ব তুলে ধরে তারিক মোর্শেদ বলেন, অনেকেই এখনও হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান, যা ঝুঁকিপূর্ণ এবং দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তাই ব্যাংকিং চ্যানেল, এক্সচেঞ্জ হাউজ কিংবা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করা জরুরি। এতে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ নিরাপদে পৌঁছায় এবং প্রেরকেরা সরকারের ঘোষিত ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পান।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের মার্চ থেকে ৬০তম তফসিলি ব্যাংক হিসেবে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক উদ্ভাবনী সেবা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে দ্রুত সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমানে ব্যাংকটি খেলাপিমুক্ত থেকে ২৮ শতাংশ আমানত প্রবৃদ্ধি ও ১৭৮ শতাংশ মুনাফা প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সূচকে ব্যাংকটির অবস্থান এখন উন্নত হয়েছে।
প্রবাসীদের সুবিধার্থে ব্যাংকটি মালয়েশিয়ার বিভিন্ন মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান ও এক্সচেঞ্জ হাউজের সঙ্গে চুক্তি করেছে। ফলে দ্রুত দেশে অর্থ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া অনলাইনে ২৪ ঘণ্টা রেমিট্যান্স ট্র্যাকিং সুবিধা, এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বিকাশ-নগদ-রকেটের মাধ্যমে উত্তোলন সুবিধা চালুর কথা তুলে ধরেন তিনি।
রেমিট্যান্স প্রেরকদের জন্য সুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠালে শুধু প্রণোদনাই পাওয়া যায় না বরং নিরাপদে হাতে পৌঁছায়। ব্যাংকিং রেকর্ড থাকায় ভবিষ্যতে ঋণ, বিনিয়োগ ও আবাসন প্রকল্পে সুযোগ সৃষ্টি হয়। এছাড়া প্রবাসীদের জন্য বিশেষ আমানত স্কিমও চালু রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রধান – ট্রেড সার্ভিস ও ইন্টারন্যাশনাল ডিভিশন জনাব মো. সাইফুল ইসলাম এবং রেমিট্যান্স বিভাগের ইনচার্জ জনাব মো. রাশেল মাহমুদ। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিবিএল মানি ট্রান্সফারের সিইও মো. সাইদুর রহমান ফারাজী, এনবিএল মানি ট্রান্সফারের সিইও মো. আলী হায়দার মর্তুজা এবং অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউসের সিইও সুলতান আহমেদ।
সমাবেশে প্রবাসীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তারা আশা প্রকাশ করেন, বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণ প্রক্রিয়া আরও সহজ ও গতিশীল হবে।
সবশেষে তারিক মোরশেদ প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বাংলাদেশের উন্নয়নের নেপথ্যের নায়ক। আমাদের ব্যাংক সবসময় আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে। আপনাদের কষ্টার্জিত অর্থের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও মূল্য নিশ্চিত করাই আমাদের অঙ্গীকার।
এমআরএম/এমএস