থ্যালাসেমিয়া একটি মারাত্মক জেনেটিক বা জন্মগত রক্তরোগ। স্বামী-স্ত্রী এ রোগের বাহক হলে তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মাতে পারে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের শরীরে রক্তের মূল্যবান উপাদান হিমোগ্লোবিন ঠিকমতো তৈরি হয় না। এই শিশুদের অন্যের রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়।
কীভাবে পরীক্ষা করা হয়: দুভাবে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা হয়। একটি অ্যামনিওসেনটেসিস; অন্যটি ভিলাস স্যাম্পলিং।
অ্যামনিওসেনটেসিস: মায়ের গর্ভে বাচ্চা একটা ব্যাগভর্তি তরল পদার্থের মধ্যে অবস্থান করে। এই তরল পদার্থকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বলা হয়। প্রথমে আল্ট্রাসনো মেশিনের সাহায্যে জরায়ুর ভেতরে বাচ্চা ও গর্ভফুলের অবস্থান নির্ণয় করা হয়। আল্ট্রাসনো মেশিনের চলমান ছবি দেখে অত্যন্ত সূক্ষ্ম একটি সুঁই মায়ের পেটের ওপর দিয়ে বাচ্চার চারপাশের তরল পদার্থের ব্যাগের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। এবার সিরিঞ্জের সাহায্যে ১৫ থেকে ২০ মিলি তরল পদার্থ টেনে আনা হয়।
করিওনিক ভিলাস স্যাম্পলিং: গর্ভফুলের মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে শিশু দরকারি পুষ্টি পায়। আল্ট্রাসনো মেশিনের চলমান ছবি দেখে সুঁইয়ের মাধ্যমে গর্ভফুল থেকে সামান্য কিছু কোষকলা নিয়ে আসা হয়। এ পদ্ধতিকে করিওনিক ভিলাস স্যাম্পলিং বলে।
এই দুই পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা তরল পদার্থ বা গর্ভফুলের কোষকলার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া রোগ আছে কি না, তা নির্ণয় করা যায়।
কখন পরীক্ষা করা হয়: মায়ের গর্ভে বাচ্চার বয়স যখন ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহ; তখন করিওনিক ভিলাস স্যাম্পলিং এবং ১৫ থেকে ১৮ সপ্তাহ তখন অ্যামনিওসেনটেসিস পরীক্ষা করা হয়। এ সময় বাচ্চার আকার থাকে দেড় বা দুই ইঞ্চির মতো।
পরীক্ষা কি বেদনাদায়ক: এসব পরীক্ষায় খুব সামান্য ব্যথা লাগে। একটা ইনজেকশন বা টিকা নিতে যেমন ব্যথা লাগে তেমন। তা ছাড়া সুঁই ঢুকানোর জায়গাটি অনেক সময় অবস করে নেওয়া হয়, যাতে ব্যথা কম লাগে।
পরীক্ষায় কোনো ঝুঁকি আছে কি: পরীক্ষাগুলো করায় ১০০ থেকে ২০০ জনের মধ্যে একজনের বাচ্চা নষ্ট হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে যিনি এই পরীক্ষাটি করবেন সেই চিকিৎসকের দক্ষতার ওপর। পরীক্ষার রিপোর্টে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়লে অন্তঃসত্ত্বা মাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি গর্ভাবস্থা চালিয়ে যাবেন কি না।
সাবধানতা কী কী: পরীক্ষাটি সম্পন্ন করতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। পরীক্ষার পর ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে বাসায় যাওয়া যায়। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ও প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হয়। বাসায় গিয়ে দুই-তিন দিন ভারী কাজ ও দূরের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হয়। মাসিকের রাস্তায় কোনো প্রকার পানি জাতীয় স্রাব বা রক্ত গেলে চিকিৎসককে জানাতে হয়।
ডা. রেজাউল করিম কাজল
অধ্যাপক, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়